৮০ শতাংশ গ্যাস সিলেটের, তবুও বঞ্চিত সিলেটবাসী
দেশের সব গ্যাসক্ষেত্র মিলে দৈনিক গ্যাস উত্তোলন হয় ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যার ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটই উত্তোলন হয় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে। তবে মাত্র ৩৬২ মিলিয়ন ঘনফুট ব্যবহার করেন সিলেটবাসী। উত্তোলনের হিসাবে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্যাসই সিলেটের। অথচ গ্যাস পাচ্ছেন না সিলেটের মানুষ। সেই সঙ্গে নিয়মের দোহাই দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে ছয় থেকে সাত হাজার পুনঃসংযোগ। বাণিজ্যিক খাতে সংযোগের অভাবে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহারে ঝুঁকিতে আছেন ৩০ সহস্রাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
সিলেটের গ্যাস বিতরণ কেন্দ্র জালালাবাদ গ্যাসের ঠিকাদারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। আর ২০১৬ সালের ২০ জুন বন্ধ হয় বর্ধিত সংযোগ। এর পর থেকে আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু করার দাবিতে আন্দোলন করেও মিলেনি সুফল।
ফিরিয়ে দেওয়া হয় ২০ হাজার গ্রাহকের সংযোগ ফি
জালালাবাদ গ্যাসের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্যাস সংযোগ বন্ধের সিদ্ধান্তের আগে সিলেটের অসংখ্য মানুষ নতুন সংযোগের জন্য আবেদন জমা দেন। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারদের কাছ থেকে এর একটি তালিকাও সংগ্রহ করে। সিলেট বিভাগের সব জেলা মিলে যার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার। এর মাঝে ২০ হাজার আবেদনকারীই গ্যাস সংযোগ পেতে নির্ধারিত পরিমাণ টাকাও জমা দিয়েছিলেন। পরে এসব গ্রাহকের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও দীর্ঘ দিনে গ্যাস ব্যবহারকারী গ্রাহকদের মাঝে বর্ধিত সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন অন্তত দুই হাজার গ্রাহক। কিন্তু আগের নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে এসব সংযোগও। অথচ ২০১৬ সালে গ্যাস সরবরাহ করতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থেকে বালাগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি গ্যাস লাইন টানা হয়, পরে ওই লাইনে গ্যাসও সরবরাহ করা হয়। তবে দেওয়া হয়নি কোনো সংযোগ।
গৃহস্থালিতে গ্যাস সংযোগ সচল করার দাবিতে সিলেটে গঠিত কমিটির সদস্য এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, নিয়ম হচ্ছে যেসব এলাকায় গ্যাস উত্তোলন হয়, সেসব এলাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কিন্তু সিলেটের ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে না। তাই আমরা শুরু থেকেই আন্দোলন করছি যাতে অন্তত আবাসিক গ্যাস সংযোগ সচল করা হয়। আমরা মনে করি আমাদের সিলেটে গ্যাস সংযোগ সচল রাখা উচিৎ। কারণ সিলেট থেকে উত্তোলিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডেও যাচ্ছে।
বিপাকে প্রবাসীরা
করোনাকালীন বকেয়া বিলের জন্য চাপ না দিতে সরকার থেকে নির্দেশনা থাওলেও সে সময়ই অহরহ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর লকডাউনের কারণে দেশে না আসতে পারায় প্রায় ৬ হাজার প্রবাসী নির্ধারিত এক বছরের ভেতর করতে পারেননি পুনঃসংযোগ আবেদন। তাতে এসব প্রবাসীরা সবাই নতুন সংযোগের আওতায় বিবেচিত হয়েছেন। তাই চেষ্টা করেও পাচ্ছেন না সংযোগ।
জালালাবাদ গ্যাস ঠিকাদার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পরমদ্যুতি দাস বলেন, ‘সিলেট বিভাগের মানুষ বেশিরভাগ প্রবাসী। যার অনেকেই পরিবার নিয়ে থাকার কারণে বিল বকেয়া হয় এবং এক বছরের ভেতর আবেদন করতে পারেন না। তাই পরে এরা নতুন সংযোগের আওতায় পড়েন। এমনকি করোনাকালীন অনেকে চাইলেও দেশে আসতে পারেননি। কিন্তু নিয়মের দোহাই দিয়ে এসব গ্রাহকের আর গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয় না।’
ঝুঁকিতে ৩০ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
সিলেট চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের নবনির্বাচিত সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, হিসাব অনুযায়ী সিলেট বিভাগে অন্তত ৩০ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন যারা গ্যাসের জন্য ভোগান্তিতে আছেন। তারা সবাই এখন সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন। এসব সিলিন্ডার ব্যবহারে অনেক ঝুঁকি থাকে। প্রায় সময় বিস্ফোরণ হয়। এতে হতাহতের শংকা থাকে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটের যেসব জায়গা থেকেই গ্যাস উত্তোলন হয়, সেসব এলাকার মানুষের কোনো না কোনো রকম ত্যাগ আছে। কিন্তু তারা যদি গ্যাস জ্বালাতে না পারে তাহলে ত্যাগের মূল্য কী পেলেন? তাই আমাদের দাবি হলো সিলেট থেকে উত্তোলিত গ্যাসে আগে সিলেটবাসীর চাহিদা মেটানো হোক।’
এ ব্যাপারে করণীয় জানতে চাইলে গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুয়াইব আহমদ মতিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। তবে যারা সংযোগের জন্য টাকা জমা দিয়েছিলেন তারা টাকা ফিরিয়ে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন ও বিপণন) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানি (বিপণন প্রতিষ্ঠান) বোর্ড নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’
এসইউ/এসএন