মাথার খুলি নিয়ে টানাটানি করছিল কুকুর, বস্তায় মিলল টুকরো টুকরো মাংস!
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
একটি প্লাস্টিকের বস্তা পড়েছিল ধান ক্ষেতে। সেই বস্তাটি কিছু কুকুর দল বেঁধে টানাটানি করছিল বস্তা থেকে বেরিয়ে আসে মানবদেহের পচে যাওয়া টুকরো টুকরো কিছু মাংস এবং হাড়ের খণ্ড খণ্ড অংশ। বস্তাটি টানাটানি দেখে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক উৎসুক জনতার ভিড় লেগেই যায়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় বস্তাবন্দি কোনা এক শিশুর মরদেহ।
সোমবার (০৩ জুন) দুপুরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া এলাকা থেকে ধান ক্ষেত থেকে বস্তাবন্দি মরদেহের খণ্ড খণ্ড অংশ পাওয়া যায়। এ খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ও ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আহসান উল্লাহসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসে। পরে ঘটনাস্থলের পুরো অংশ কার্টন করে রেখে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা হাড় ও দেহের অন্যান্য অংশ সংগ্রহ করা হয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়- বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মাংসের টুকরো। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল চারদিকে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়েই ছুটে যায় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরেই মো. সুমন মিয়ার মেয়ে তার বাড়ির সামনে থেকে ৯ দিন আগে নিখোঁজ হওয়া ১০ বছরের ফুটফুটে শিশু নওশীন ইসলাম শর্মিলার বাড়ি।
গত ২৬ মে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে। ধারণা করা হচ্ছে, মাথার খুলিটি হয়ত বা শিশু শর্মিলার। তবে, দেহের অন্যান্য অংশের এখনও কোনো সন্ধান মেলেনি। কোথায় রয়েছে বাকি অংশ এ নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মাথার খুলির ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এরপরই এর রহস্য উদ্ঘাটন হবে।
স্থানীয়দের ধারণা- দুর্বৃত্তরা হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য হয়ত বস্তাবন্দি করেছিল। এটা শর্মিলার মাথার খুলি কি-না সন্দেহ রয়েছে। তবে তারা পুলিশকে গভীর তদন্তের অনুরোধ জানান।
শর্মিলার চাচা কাইয়ুম মিয়া জানান- সোমবার সকালে বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে লাশের গন্ধে বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে কিছু কুকুর একটি বস্তা টানাটানি করে সমস্ত মাথার খুলি বের করে দেহ লন্ডভন্ড করে ফেলে। দেহের হাড়গোড়ও ছিল খণ্ড খণ্ড। লাশ দেখে চেনার কোনো উপায় নেই কার লাশ। এটি শর্মিলার লাশ কি না আমরা এখনও নিশ্চিত না। তবে, তার পড়নের লাল পাজামার অংশ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এটিই শর্মিলার মরদেহ হতে পারে।
শর্মিলার বাবা সুমন মিয়া বলেন- গত ২৬ মে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শর্মিলা। পরে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। থানায় জিডিও করা হয়। আজ যেখানে খুলি পাওয়া গেছে ওই জায়গা দিয়ে কয়েকবার খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। আজ সকালে কুকুরে মাথার খুলি টানাটানি করছিল। পরে লোকজনের খবর শুনে এখানে আসি। বস্তা থেকে যে জামা পাওয়া গেছে সেটি নিখোঁজের সময় সেটি তার মেয়ের পড়নে ছিল।
এ ঘটনায় ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আহসান উল্লাহ্ জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয় এবং জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার মহোদয়সহ জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এছাড়া ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করেছে। তিনি বলেন- মাথার খুলির ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। পরে জানা যাবে মাথার খুলিটি নিখোঁজ শিশু শর্মিলার কিনা। এ নিয়ে আমাদের তদন্ত চলছে।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান- দ্রুতই এর রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।