সর্ববৃহৎ আশ্রায়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
গাজীপুরের শ্রীপুরের গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ আশ্রায়ন প্রকল্প ৮ একর ৯০ শতাংশ জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে। বুধবার (২২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্ভোধন করবেন এবং গাজীপুর জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নয়াপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পে ঠাঁই পাওয়া আফোজান বিবি (৬০) জানান, এ এলাকাতেই তার জন্ম। ৬ বছর যাবত একটি ঘরের জন্য মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। একটি ঘরের অভাবে অনেক কষ্ট করে জীবন পার করছি। আমাদের মতো অসহায়দের পাশে হাসিনা বেডি দাাঁড়িয়েছেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। আমাদের জমি, পাকা ঘর তৈরী করে দিয়েছেন। এখন বাকি জিবনডা ভালো মতন কাটাতে পরব।
শ্রীপুরের কাওরাইদ রেল ষ্টেশনে রাতে আশ্রয় নিতো বৃদ্ধ হামিদা বেগম (৬০)। তিনি বলেন, ইস্টিসনে মশা, মাছি ও দুর্গন্ধ নিয়ে ঘুমাতে হতো। হাছিনা আফা (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমি অনেক সুখে আছি। দোয়া করি আল্লাহ শেখ হাছিনা আফারেও সুখে রাখবে।
আমীর আলী (৫০) বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে বনের ভিতর কোনো রকমে ঘর তুলে বসবাস করতেন। মাঝে মাঝে বন বিভাগের রোকদের ভয়ে ঘর ছেড়ে চলেও যেতে হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে ঘর ভিজে যেতো। শীতে কষ্ট করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে এখন আর কষ্ট করতে হবে না। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটাতে পারবো।
আশ্রয়নে ঘর পেয়ে জমিলা খাতুন বলেন, আমি অনেক অনেক খুশি হয়েছি। নিজের ঘরে থাকতে পারবো। আগে অন্যর বাড়িতে তাকতে হতো। আল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ হায়াত দেউক। তিনি যেন অসহায়দের পাশে সবসময় থাকতে পারে।
শ্রীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কে এম মোহিতুল ইসলাম জানান, এ আশ্রয়ন প্রকল্পে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, দিনমজুর, বয়স্কসহ ১৪২টি গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রতিটি ঘর তৈরীতে সরকারীভাবে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম জানান, প্রতিটি ঘরে দুটি বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট রয়েছে। ওইসব ঘরে প্রথক মিটারসহ বিুদুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। খুবই সচ্ছতার সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
ডিসি আনিছুর রহমান আরও জানান, এ আশ্রয়ন প্রকল্পের অভ্যন্তরে উপহারের ১৪২টি ঘর ছাড়াও রয়েছে স্কুল, মসজিদ, খেলার মাঠ, সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। তার মধ্যে ১টি পুকুর, ১টি সুপরিসর মসজিদ, ১টি বিদ্যালয় কাম-স্টাডি সেন্টার, ১টি কমিউনিটি সেন্টার কাম দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র, ১টি কবরস্থান, প্রকল্পের অভ্যন্তরে প্রশস্ত সড়ক, সৌরচালিত সড়কবাতি নির্মাাণ করা হয়েছে।
এছাড়াও পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি, ফলদ, বনজ গাছ সমৃদ্ধ বাগান এবং কৃষি বিভাগ কর্তৃক পারিবারিক পুষ্টি বাগান সৃষ্টির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা বলতে পারছি গ্রামের ভেতর পূর্ণাঙ্গ এক শহর গড়ে উঠছে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটির মাধ্যমে।
তিনটি ধাপে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ প্রকল্পসহ গাজীপুরে 'ক' শ্রেণীর অর্ন্তভুক্ত ১ হাজার ৮১৭ টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ পাকা ঘর দেয়া হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ৮১৭টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬৩০টি, শ্রীপুরে ২৮০টি, কাপাসিয়ায় ৩১৮টি, কালিয়াকৈরে ৪৪০টি এবং কালীগঞ্জে ১৪৯টি।
আশ্রয়ণে স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে তাদের চোখে মুখে আনন্দের বন্যা। সকাল হলেই সন্তনদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে। নিশ্চিন্ত মনে কাজ করছেন। সরকারের উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর থেকে নিচ্ছেন নানা ধরনের কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ। জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকির ফলে এগিয়ে যাচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের দরিদ্র ও আশ্রয়হীন বাসিন্দারা।
এএজেড