কিশোরগঞ্জে সহজলভ্য মাদক গাঁজা: পুলিশ সুপার
মাদকের ভয়াল থাবায় প্রতিনিয়ত ধংসের পথে এগোচ্ছে যুব সমাজ। বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ও জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করেছেন এবং সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক নিমূর্লে একসঙ্গে কাজ করছে। কিশোরগঞ্জে মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনগত অভিযান তৎপরতা চালানো হচ্ছে। কিশোর গ্যাং, ছিনতাই, চুরি রোধে জেলা পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে প্রতিনিয়ত নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ নজরদারির কারণে ইদানিং মাদক কারবারিরা অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় মাদকের মামলা হয়েছে ৭৯২ টি এবং মাদক মামলার আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে ১ হাজার ৮৪৪ কেজি, ইয়াবা ৭০ হাজার ৬৭৫ পিস, ফেন্সিডিল ৩৩০ বোতল, হুইস্কি ২৮৪ বোতল, বিদেশি মদ ৪৯৯ বোতল, স্কাফ ১৯ বোতল, চোলাই মদ ১ হাজার ৫৫২ লিটার, মদ তৈরীর কাঁচামাল কোয়াস ১৪২লিটার, নেশাজাতীয় ৪ টি ইনজেকশন ও ৩০গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত এসব মাদকের মূল্য আনুমানিক প্রায় ৬ কোটি ১০ লক্ষ ৮৭ হাজার ৩০০ টাকা।
একদিকে মাদক পাচারকারী অন্যদিকে বহনকারী এবং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দিনরাত চলছে অভিযান। এতে করে কমে আসছে মাদকের সহজলভ্যতা আর জনমনে ফিরছে অনেকটাই স্বস্তি। পুলিশের নিয়মিত টহলের কারণে মাদকসেবিদের এখন চোখে পড়ে না। তবে মাদকের ব্যবহার একবারে কমে না গেলেও সন্ধ্যার পর কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। নরসুন্দার লেক পাড়, শহরের অলি গলি, মাঠে ময়দানে মাদক সেবকদের আখড়া ছিল। এসব স্থানে কমে যাচ্ছে মাদককারবারী ও বাইরে থেকে আসা মাদক সেবীদের আনাগোনা। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ এলাকার স্থানীয় মাদক পাচারকারী ও ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, এই জেলায় প্রতিদিন ভৈরব, কটিয়াদি ও সদর থানায় সবচেয়ে বেশি মাদক উদ্ধার করা হয়। মাদকের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ তৎপর থেকে নিয়মিত অভিযান তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া হয়ে গাঁজা নামক মাদকসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের বড় বড় চোরাচালান কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় চলে যায়।
মাদকদ্রব্য, কিশোর গ্যাং, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ দমন ও আত্মহত্যার প্রবণতা রোধকল্পে নিয়মিত জেলা পুলিশের নির্দেশনা মোতাবেক বিট পুলিশিং সভা হচ্ছে। জনসচেতনতা বাড়াতে সকল উপজেলায় পর্যায়ক্রমে পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে অবস্থান নিয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে এর ভয়াবহতা সমাজকে ধংসের পথে নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকেরা।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, বিগত ছয় মাসের অভিজ্ঞতায় মাদক সম্পর্কে আমি বলতে চাই ১৩ উপজেলার মধ্যে ভৈরব, কটিয়াদি ও সদর উপজেলায় মাদকের বিস্তার বেশি এবং অন্যান্য উপজেলাতেও একেবারে মাদক নেই তা বলা যাবে না তবে মাদকের প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমবেশি রয়েছে। এইখানে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মাদক পাওয়া যায় মূলত গাঁজা। গাঁজা কম টাকায় পাওয়া যায় বিধায় মাদকসেবিদের কাছে এই মাদকের কদর বেশি।
কিশোরগঞ্জ সরাসরি সীমান্তের সঙ্গে সংযুক্ত জেলা নয় কিন্তু সীমান্তের অনেক জেলার সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলার সংযোগ রয়েছে। এই জেলাকে মাদক চালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে মাদক কারবারিরা ব্যবহার করে। মাদক পাচার হয় স্থলপথে ও নৌপথে। মাদক কারবারিরা যেসকল তথ্য আমাদের দেয় সেই অনুযায়ী বলা যায় কিশোরগঞ্জে নৌপথে সবচেয়ে বেশি মাদক আসে।
জেলা পুলিশের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ,র্যাপিড একশান ব্যাটালিয়ান (র্যাব), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সম্মিলিত ভাবে মাদক চোরাচালান ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রতি মাসে গড়ে ২৫০ টি মামলা হয় এর মধ্যে ৫০ শতাংশ মামলা হয় মাদকের। ১৩৩টি বিটে পুরো জেলাকে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটা বিটে অপরাধ নিবারণমূলক নানামুখী কার্যক্রম চলছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ একটা চলমান প্রক্রিয়া। মাদক নিয়ন্ত্রণ ও মাদকের বিস্তার কমিয়ে আনার জন্য মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এএজেড