মানুষের হাসি-কান্না নির্ভর করছে বাজারের উপর
ডাল, শাক, নিরামিষ সবজি বেশি খাওয়া লাগে। ডিম মাঝে মধ্যে খাই, মাছ মাংস আগের চেয়ে খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছি, বাড়িতে মেহমান আসবে তাই বাজার থেকে সোনালি মুরগি কিনলাম ৩৩০ টাকা কেজি হিসেবে। যে হারে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে তাতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে কিনে খাওয়া এবং অতিথি আপ্যায়ন করাটা খুব বেদনাদায়ক।
নওগাঁ পৌর কাঁচা বাজারের মুরগির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো ঢাকাপ্রকাশ-কে বলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাম।
তিনি আরও বলেন, সব কিছু দাম বাড়ার কারণে পরিবারের খরচ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। রমজানের মধ্যে আরও দাম বাড়লে বাধ্য হয়ে মেহমানদের বাড়িতে আসতে মানা করতে হবে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমশই লাগামহীন হয়ে পড়ায় বাজারে আসা ক্রেতারা অত্যন্ত ক্রদ্ধ। তারা বলেন, সামনে রমজান আসছে। অথচ বাজার অস্থির হয়ে আছে। দেশের একটি নিয়ম হয়ে গেছে, রমজান এলেই মূল্য বেড়ে যায়। কেন বাড়ে, কারা বাড়ায় এটা দেখভাল করার কেউ নেই। একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে আর কমতে চায় না, এটা যেন স্বাভাবিক নিয়মে দাঁড়িয়েছে। তাই বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের কাছে বাজার মনিটরিং জোরদারের দাবি সাধারণ মানুষের।
নওগাঁ পৌর শহরের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন ১১০ টাকা, আদা দেশি ১৪০ টাকা ও ভারতীয় ১১০, সজনে ১৬০, বেগুন ৪০ টাকা, করলা ১০০, পটল ৮০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০, ঢেঁড়স ১০০, কাঁচামরিচ ১০০, লাউ প্রতি পিস ৩০, কপি প্রতি পিস ৩৫ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, হলুদ ২০০ টাকা, জিরা ৬৫০ টাকা, চিনি ১১৫ টাকা, মসুর দেশি ১৪০ ও ভারতীয় ১০০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, সয়াবিন ১৮৫ টাকা, সরিষার তেল ২১০ টাকা, খেসারি ৯০ টাকা, আটা ৬৫ টাকা, ময়দা ৭৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া বয়লার মুরগি ২৩০ টাকা, সোনালি ৩৩০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজিতে। লাল মুরগির ডিম প্রতি পিস ১১ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি।
মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, টেংরা মাছ ৫৫০ টাকা, পাবদা ৩০০টাকা, সিলবারকাপ ২-৩ কেজি ওজনের ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০টাকা, কাতল ছোট ২৫০ ও বড় ৩৮০ টাকা, পাঙ্গাস বড় ২০০ টাকা, শিং মাছ ৫৫০টাকা, দেশী মাগুর ৬০০, ছোট বোয়াল ৫০০ টাকা ও বড় বোয়াল ৮০০ টাকা, রুই ২৫০-২৮০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
গৃহকর্মী আমিনা বেগমের বাড়িতে জামাই-মেয়ে এসেছে। এইজন্য কিছু বাজার করতে এসেছেন বাজারে। বয়লার মুরগির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাম শুনছিলেন। এসময় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দোকানি দাম চাচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি কেনার মতো সামর্থ্য নেই। নিরুপায় হয়ে মুরগির গিলা, কলিজা, পাসহ ১৮০ টাকা কেজি দরে ১ কেজি কিনলাম।’
পৌর খুচরা বাজারে বেলা ১২টার দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা হয়। এসময় তিনি বলেন, ‘তিন মেয়ে, এক ছেলেসহ সাতজনের সংসার। বেতন পাই ১৮ হাজার টাকা। এই টাকায় ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচসহ সন্তানদের পেটভরে দুমুঠো খাওয়াতে পারছি না ঠিক মতো। এ যে কতটা কষ্টের বলে প্রকাশ করতে পারব না।’
মাছ বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্বল্প আয়ের মানুষের হাসি-কান্না অনেকটাই নির্ভর করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের উপর। দাম কম থাকলে পেটভরে দুমুঠো খাওয়া যায়। দাম লাগামছাড়া হলে অনেক সময় না খেয়ে কাটাতে হয়। যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে মাছ কিছুদিন আগে ২১০ টাকা কেজিতে নিয়েছিলাম সেই মাছ আজকে ২৪০ টাকা কেজি চায়। তাই বাধ্য হয়ে পরিমাণে কম কিনলাম।’
তৌকির হোসেন (ছোট পদে) সরকারি চাকরি করেন। মাছ বাজারে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো হিসাব করে চলা মানুষ আর গরুর মাংস খেতে পারবে না। কম দামের ব্রয়লারও এখন ২৩০ টাকা কেজি। মাছের দামও বেড়েছে। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে, অন্য খরচে টান পড়ছে।’
নওগাঁ শহরে মেসে থেকে পড়াশোনা করেন আল-আমিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা হলে থাকা খাওয়া হয়ে যেত। এখন ৪ হাজার টাকা দিয়েও হয় না। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো রকম টিউশনি করে পড়াশোনা ও মেসের খরচ চালায়। এখন দেখতিছে টিউশনি করে পড়াশোনা ও মেসে থাকা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সরংক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রুবেল আহমেদ বলেন, আমরা সপ্তাহে পাঁচ দিন বাজার মনিটরিং করে থাকি। যেন কোনো বিক্রেতা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য না নেয়। বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতেই এই অভিযান চালানো হয়ে থাকে। সামনে রমজান আসছে। আমাদের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং আরও বেশি নজরদারিতে রাখা হবে।
এসএন