অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, টাকা ঢুকছে কার পকেটে

জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারি বিধি মোতাবেক রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও কিশোরগঞ্জে সেটি মানা হচ্ছে না। ট্রান্সমিটারের পিলারে বৈদ্যুতিক মিটার বসিয়ে ফুটপাত বাণিজ্যসহ ৩ শতাধিক ভাসমান দোকান অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক দোকানে সন্ধ্যার আগেই জ্বলে বাতি। বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফুটপাতের দোকানে জ্বল জ্বল করে বিদ্যুতের আলো। কেউ কেউ নিয়ম রক্ষায় জরিমানার ভয়ে রাত ৯টার মধ্যেই দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।
দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ শহরের গৌরাঙ্গ বাজারের ব্রিজের দুই পাশ, নরসুন্দা নদের পাড়, রাস্তার ফুটপাতসহ অসংখ্য দোকানের ব্যবসায়ীরা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ভাসমান দোকান চালাচ্ছেন। পথচারীদের প্রতিদিনের এই ভোগান্তির শেষ কবে হবে তাও বলা দুষ্কর। একদিকে পৌর শিশু পার্কের সামনে পার্কের বিদ্যুৎ লাইনে চলছে হকারদের রমরমা ব্যবসা অন্যদিকে পথচারীদের হাঁটার রাস্তা দখল করে পুরান থানা, তেরিপট্টি, বড় বাজারের ব্রিজের পূর্ব পাশে নরসুন্দা নদের পাড় দখল করে ফুটপাত বানিয়ে ব্যবসা করছে অনেক হকাররা। প্রশাসন এসব হকারদের উচ্ছেদ করলেও উচ্ছেদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সেই জায়গা দখল করে আবার ব্যবসা শুরু করে তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, পথচারীদের রাস্তা দখল করে সারা শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টির মূল কারণ হচ্ছে ফুটপাতের দোকান। নদীর পাড়ের জায়গাও হকারদের দখলে। এমন অবস্থায় করুণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কিশোরগঞ্জবাসী।
এদিকে কয়েকজন ফুটপাত ব্যবসায়ী জানায়, প্রতিদিন আমরা লাইটের বিল দেই। জায়গার বিল দেই ৫০-৬০ টাকা। যারা এখানে ব্যবসা করে সবাই এক নিয়মেই চলে। এককালীন টাকা দিয়ে আমরা এখানে দোকান বসিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, বিদ্যুতের টাকা নেয় যারা লাইন চালায় তারা। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৫০০-১০০০ টাকা জমা দিয়ে লাইন নিতে হয় তারপর প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিল ২০ টাকা নেয়। আরেক দোকানি বলেন, বিদ্যুৎ বিল ২০ টাকা নেয়। দুই বাতি জ্বালালে ৫০ টাকা দিতে হয়। তাহলে প্রতি মাসে একজন সামান্য হকার বিদ্যুতের বিল দিয়ে যাচ্ছে ৬০০-১৫০০ টাকা। সেই হিসেবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে মাসে লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী চক্র। এই চক্রে যুক্ত রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
অবৈধ সংযোগ দিয়ে একদিকে বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে অন্যদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানা গেছে।
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে পিডিপির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, পৌর পার্কের বৈদ্যুতিক মিটার থেকে বৈধ সংযোগ তারা নিচ্ছে। এটা পৌরসভা আর প্রশাসনের দায়িত্ব। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।
গৌরাঙ্গ বাজার ব্রিজ ও ব্রিজের দুই পাশে ভাসমান ব্যবসায়ীরা কিভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,বৈদ্যুতিক মিটারের বাইরে কোনো বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে না ।
এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, হকারদের সকালে উচ্ছেদ করলে বিকালে আবার বসে যায়। পৌর পার্কের বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে কিভাবে ভাসমান ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, আমরা পার্ক ইজারা দিয়েছি। এ বিষয়ে ইজারাদারকে জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর পাওয়া যাবে৷ তবে ইজারাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সকল বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে ফুটপাতের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ
