কিশোরগঞ্জের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার
ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহীদ মিনার। অথচ কিশোরগঞ্জের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও ওইসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার গড়ে না উঠায় শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পাশাপাশি অন্যান্য দিবস পালন করতে পারছে না। ফলে শহীদ মিনারে ফুল দিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যেতে হয় অন্যত্র।
জানা যায়, জেলার ২০টিরও বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা নেই বলে স্থাপন করা যাচ্ছে না শহীদ মিনার। জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ হাজার ৩২৮টি। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ১৮টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপিত হয়নি। এদিকে জেলার ১৪৫টি মাদ্রাসার মধ্যে ৮টি মাদ্রাসায় রয়েছে শহীদ মিনার। অন্যদিকে জেলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর ৯৫ ভাগই শহীদ মিনারহীন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় প্রায় দুই শতাধিক স্কুলে শহীদ মিনার নেই।
জেলার কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে থাকেন। আবার কেউ কেউ বিদ্যালয় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান।
ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন, বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণে বরাদ্দের অভাব। এ ছাড়া সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণে বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসে না। অনেক বিদ্যালয়ে জায়গা স্বল্পতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা বলছেন, ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে।
সরকারি আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ের অভিভাবক ঝুমা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ১৯৬৭ সালে এই বিদ্যালয় নির্মিত হয়। শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠের শহীদ মিনারে যায়। যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেসব বিদ্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
গুরুদয়াল সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এএসএম সাইফুজ্জামান বলেন, ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করার জন্য ও মমত্ববোধ জন্মানোর জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে সেখানে অবশ্যই একটি করে শহীদ মিনার স্থাপন করা উচিত। এতে ভাষার প্রতি শিশুরা যেমন শ্রদ্ধাশীল হবে তেমনি ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো সম্ভব হবে।
সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল লতিফ বলেন, স্কুলের জন্য শহীদ মিনারের প্রয়োজন রয়েছে। স্কুলে শহীদ মিনারের জন্য আলাদা সরকারি বাজেট নেই। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে এবছর সরকারি আদর্শ শিশু বিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কিছু বিদ্যালয়ে জায়গার সংকট রয়েছে। জায়গা ব্যবস্থা করে আগামী ৬ মাসের মধ্যে সবগুলো বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
এসজি