নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী 'আরসা' ও 'আরএসও'র মধ্যে সংঘাতের জেরে শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আশ্রয় নেওয়া ৫৩৭টি পরিবারের ২ হাজার ৮৮৯ জন রোহিঙ্গাকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুজ্জামান চৌধুরী জানান, শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের গণনার কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে ২ হাজার ৮৮৯ জন রোহিঙ্গার মধ্যে অনেকেরই উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধন রয়েছে। তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে।
এজন্য জাতীয়ভাবে একটি কমিটি হয়েছে জানিয়ে মিজানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ওই কমিটি এ কাজ করছে। এ ছাড়া যারা কোনো ক্যাম্পে নিবন্ধিত নন, তাদের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে। গণনা করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে চিহ্নিত কোনো অপরাধী বা যাদের নামে মামলা রয়েছে তাদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইসিআরসি) ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালিত এক পরিসংখ্যানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের এ সংখ্যা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ।
তিনি বলেন, সংঘাতের পর তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে তাঁবু খাটিয়ে এসব রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছেন। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) সেখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের গণনার কাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় সোমবার। গণনা কাজের সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন একজন মেম্বার। তারা প্রথম ও দ্বিতীয় দিন মিলে মোট ৫৩৭টি রোহিঙ্গা পরিবার পেয়েছেন। আর অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা পান ২ হাজার ৮৮৯, যা পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের গণনা সবে শেষ হয়েছে। এরপর তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যখন সিদ্ধান্ত নেবেন, ঠিক তখনই তা বাস্তবায়ন হবে। এর আগে নয়। তবে সময় ক্ষেপণ করা হবে না। কেননা পরিবেশ রক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা এখন মুখ্য বিষয়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময় পালিয়ে আসাসহ অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্পে। ওইসব ক্যাম্পের সার্বিক দেখভাল ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে আরআরআরসি (শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার)।
অন্যদিকে তুমব্রু কোনারপাড়া শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির দায়িত্বে রয়েছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি)। ক্যাম্পটিতে ৬৩০টি পরিবারে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছিল। ১৮ জানুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রোহিঙ্গা হামিদ উল্লাহ নিহত এবং দুই জন আহত হন। এ সময় শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বসতঘর পুড়ে যায়। এরপর তুমব্রু বাজারে তাঁবু খাটিয়ে আশ্রয় নেন তারা। বর্তমানে সেখানে ২ হাজার ৮৮৯ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করার তথ্য পাওয়া গেলেও বাকিরা কোথায় তা তা বলতে পারছেন না কেউ।
এএজেড