প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রাজশাহীতে কঠোর নিরাপত্তা
দুই দিন পর রাজশাহীতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা । আগামী ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন তিনি। এটি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভাও। আর এই সমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে পুরো রাজশাহী। এরই অংশ হিসেবে র্যাব, পুলিশ, সকল গোয়েন্দা সংস্থা নগরীজুড়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই সমাবেশস্থল মাদ্রাসা মাঠে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাঠে জনসাধারণের চলাচলও এখন সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
সমাবেশস্থল ও নগরী ঘুরে দেখা যায়, সাদা পোশাকে পুলিশি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। মাদ্রাসা মাঠে মঞ্চ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। মাঠে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাদ্রাসা মাঠ। জনসাধারণের মাঠে প্রবেশেও এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আশপাশের এলাকাগুলোতেও পুলিশের নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও পুলিশের পাহারা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে প্রায় ৫০০ শতাধিক সেচ্ছাসেবী সমাবেশস্থলের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে।
জানা যায়, মাঠে আমন্ত্রিত অতিথিসহ গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়েও মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও নগরীতে চলাচলকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। তা ছাড়াও সমাবেশ চলাকালীন মাদ্রাসা মাঠে প্রবেশের পর একান্ত জরুরি ছাড়া বের হওয়ার বিষয়েও কড়াকড়ি থাকবে।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার পিএসসি,জি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সকল পর্যায়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে সমাবেশস্থলসহ নগরী ও যে রুটে প্রধানমন্ত্রী আসবেন সেখানে গোয়েন্দা তৎপরতা আছে। এ ছাড়াও সামাবেশের দিন মাঠে ১০ পেট্রোল র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। তা ছাড়াও ৩টি রিজার্ভ পেট্রোল থাকবে। এর পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল ফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর অপ্রীতিকর কোনো কিছুর শঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই। এ বিষয়ে র্যাব তৎপর রয়েছে।
এদিকে মাদ্রাসা মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভাগীয় এই সমাবেশকে সামনে রেখে রাজশাহী মহানগর এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন, ১৯৯২ এর ২৬ (ঢ), ২৯ এর ১(ক) ও ২৯ এর ১ (খ) ধারার অর্পিত ক্ষমতাবলে রাজশাহী মহানগর এলাকায় আগামী ২৭ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের অস্ত্র-শস্ত্র বহন, আতশবাজি, পটকা ফুটানো, বিষ্ফোরক দ্রব্য বহন, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার এবং অনুমতি ব্যতিরেকে ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ১৯(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে যেকোনো ধরনের মাদক দ্রব্য দেশি ও বিদেশি মদ, স্পিরিট/অ্যালকোহলসহ নেশা জাতীয় দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং উপরে বর্ণিত সময়ে অনুমোদিত সকল বার, মদের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দিয়েছেন আরএমপির পুলিশ কমিশনার মো. আনিসুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, আরএমপি যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্রের বিষয়টি নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত থাকবে না। তবে এর বাইরে সকল নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবেই মনিটরিং করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে সামনে রেখে এরইমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে পুলিশ। ঢাকা হেড কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে আগে থেকে সোচ্চার রয়েছে পুলিশ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিলিভ ডিফেন্সের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. ওহিদুল ইসলাম বলেন, তারা এসএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। ২৭ জানুয়ারি থেকে মাঠে ফায়ার সার্ভিস সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী যে সকল ভেন্যুতে যাবেন, সেখানেও তাদের ব্যবস্থা থাকবে। সমাবেশকে সামনে রেখে তাদের প্রায় ৮৫-৯০ জনের টিম প্রস্তুত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল জানান, সমাবেশকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তাদের মতো দায়িত্ব পালন করবে। তবে তাদের পক্ষ থেকে ৫০০ সেচ্ছাবেসী সেবা দিবে। সমাবেশে সকলের জন্য পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
এসআইএইচ