কবরে নেই জঙ্গির লাশ, মিলেছে কম্বল
বান্দরবানে পাহাড়ের গহীনে সশস্ত্র দল 'কেএনএফ'বা 'বম পার্টি'র আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া নতুন জঙ্গি সংগঠন 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র এক সদস্যও কবর থেকে লাশ উত্তোলন করতে গিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন। কিন্তু সেই কবরে লাশ মেলেনি, মিলেছে কম্বল।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে রুমা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুন শিবলী বলেন, আদালতের আদেশ ছিল মরদেহ উঠাতে হবে। গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিরা কবরস্থান দেখিয়ে দেবে। তাদের দুই জনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলে তারা কবরটি দেখিয়ে দিয়েছে। কবর খোড়া হয়েছে কিন্তু মরদেহ পাওয়া যায়নি। সেখানে সামান্য কিছু আলামত ছিল, সেটি নিয়ে আসা হয়েছে।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম । কবর খুঁড়ে মরদেহের পরিবর্তে একটি কম্বল পাওয়া গেছে বলে তারা ফিরে এসে আমাকে জানিয়েছে। কয়েকদিন আগে এ কবর খোঁড়া হয়েছে এমনটাই ধারণা করছি। জানা যায়, গত ১১ জানুয়ারি র্যাবের হাতে আটক ৫ জঙ্গির মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত দুই জঙ্গি র্যাবের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে এক জঙ্গি মারা যাওয়ার তথ্য দেয়।
তাদের তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার সকালে দুই জঙ্গি ও নিহত আল আমিনের বাবাকে নিয়ে থানচির রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের দুর্গম লুয়ংমুয়াল পাড়ায় নিহত জঙ্গির মরদেহ উদ্ধারে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় তারা ঘটনাস্থল থেকে কবরের সন্ধান পেলেও সেখানে আল আমিনের মরদেহ পায়নি। তবে কবর খুড়ে একটি কম্বল উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া ঘটনাস্থলের পাশেই কেএনএফের একটি ক্যাম্পেরও সন্ধান পায় র্যাব। গতকাল রবিবার কবর খোঁড়ার সময় উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যসহ মোট বিশজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, লাশ না পেয়ে তারা ফিরে আসে।
এদিকে ঘটনাস্থলে একটি প্যান্ট ও কম্বল দেখে নিজের ছেলের বলে দাবি করেন নিহত জঙ্গির বাবা নুরুল আলম। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে একটি কম্বল দেখেছি যেটি আমার বাসার।
জঙ্গির বাবা নুরুল আলম বলেন, এখানে যে কোন একটি গ্রুপ প্রশিক্ষণ দেয় । এত গহিণ অরণ্যের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এটা ভাবনার বাইরে।
তিনি আরও বলেন, মৌলবাদীদের সঙ্গে ইসলামের অপপ্রচার করে করে ইসলামের ভুল তথ্যে দিয়ে তাদেরকে ভুলপথে ধাবিত করছে তাদের সরকারের কাছে আমি বিচার চাই। এটাই আমার একমাত্র আবেদন।
এদিকে র্যাব জানায়, থানচির মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রেমাক্রী প্রাংশা ইউনিয়নে একটি পাহাড়ি ঝিরির কাছে কুমিল্লার নুরুল ইসলামের ছেলে আল আমিন নামের এক জঙ্গিকে কবর দেওয়া হয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে ওই জঙ্গি কেএনএফ-এর জর্ডান ক্যাম্পে মারা গেলে তাকে পাহাড়ি ঝিরির পাশে কবর দেওয়া হয়, সে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার সদস্য।
এ বিষয়ে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মইন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে শিথিল নামে এক জঙ্গি আমাদের কাছে স্বীকার করেছে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় গত ২৫ নভেম্বর আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিন নামে এক জঙ্গি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে আমরা মৃতদেহ উঠাতে ওই জায়গায় গিয়েছিলাম। আসামি শিথিল নিজেই আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছিল কোথায় লাশটি রাখা হয়েছে। তবে তার বর্ণনা মতে ওই জায়গায় এসে কবর পাওয়া গেলেও কোন মরদেহ পাওয়া যায়নি। তবে যে কম্বল মুড়িয়ে মরদেহ দাফন করা হয়েছিল সেটি উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন যারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তারা পরবর্তীতে যে কোন হামলা বা সহিংসতা চালানোর জন্য দেশের অভ্যন্তরে। সর্বপ্রথম ৫৫ জনের তালিকা দিয়েছিলাম। তারা নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এ তালিকা ধরে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসাতে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।
গত ১২ জানুয়ারি র্যাব জানায়, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জঙ্গিরা রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার গহীন পাহাড়ে সশস্ত্র দল 'কেএনএফ' বা 'বম পার্টি'র আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল।
গ্রেপ্তার জঙ্গিদের মধ্যে চারজন হলেন, নোয়াখালীর নিজামুদ্দিন হিরণ ওরফে ইউসুফ (৩০), সিলেটের সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন (৩০), কুমিল্লার সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা (২৭) ও বায়েজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াছ ওরফে বাইরু (২১)। এবং বাকি একজন কুমিল্লার কিশোর (১৭)।
পরে তাদের জিজ্ঞাবাদের জন্য রিমান্ডে পায় পুলিশ। তখন দুই জঙ্গি আল আমিনকে কবর দেওয়ার কথা জানায়। সেই সূত্র ধরেই মরদেহের খোঁজে শনি ও রোববার অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন।
এছাড়াও গত ২০ অক্টোবর বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সুরা সদস্যসহ ৭জন জঙ্গী এবং কুকি চিন এর ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও সরাঞ্জম উদ্ধার করা হয়।
গত ৭ ও ৮ জানুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম এলাকা থেকে জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়ার গ্রুপের (জঙ্গি) কাছে অস্ত্র সরবরাহর অভিযোগে অস্ত্রসহ তাদের ৩ সহযোগিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এবং ১১ জানুয়ারি থানচি ও রোয়াংছড়ির দূর্গম এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৫জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এএজেড