ঘুষ বাণিজ্যে অভিযুক্ত ড্রাগ সুপারের হুমকি!
লক্ষ্মীপুরে ড্রাগ লাইসেন্স দেয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্যের ঘটনায় তদন্ত কমিটির কর্মকর্তাদের সামনেই অভিযোগকারী (ফার্মেসী ব্যবসায়ী) হুমায়ুন কবীরকে হুমকি দিলেন অভিযুক্ত ড্রাগ সুপার সুশীল কুমার ঢালী। সুশীল কুমার ঢালী লক্ষ্মীপুর জেলা ড্রাগ অফিসের সদ্য বদলীকৃত ড্রাগ সুপার। আজ রবিবার (১৫ জানুয়ারী) বিকেলে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের নিকট হুমকি-দমকির বিষয়টি জানান ভুক্তভোগী ফার্মেসী ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর।
ভূক্তভোগী হুমায়ুন কবীর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের কালীবৃত্তি নতুন বাজার এলাকার আলী আহাম্মদের ছেলে। এবং স্থানীয় আহম্মেদ ফার্মেসীর স্বত্তাধিকারী।
জানা যায়, গত শনিবার (১৪জানুয়ারী) জেলা ওষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে (ড্রাগ অফিস) লাইসেন্সে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করেন তদন্ত কমিটির প্রধান কর্মকর্তা আবদুল মালেকসহ তিনজন কর্মকর্তা।
এসময় ড্রাগ অফিসেই তদন্ত শুনানীকালে ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে উত্তেজিত কণ্ঠে ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবিরকে হুমকি দেন সুশীল কুমার ঢালী।
এসময় তাকে শান্ত হতেও বলেন তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল মালেক। পরে ভুক্তভোগীর ওষধ ফার্মেসী পরিদর্শণ শেষে তদন্ত কর্মকর্তারা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে অভিযুক্ত ড্রাগ সুপারের সাথে গোপন বৈঠক করেন।
এর আগে গত ১লা জানুয়ারী (রবিবার) ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের মহা পরিচালক বরাবর ড্রাগ সুপার সুশীল কুমার ঢালী ও লক্ষ্মীপুর ড্রাগ অফিসের আউটসোর্সিং কর্মচারী আমির হোসেনের বিরুদ্ধে ফার্মেসী দোকান মালিকদের ড্রাগ লাইসেন্স দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা ঘুষ হাতিয়ে পালানোর লিখিত অভিযোগ করেন হুমায়ুন কবীর। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২২ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কর্মচারী (আউটসোসিং) আমির হোসেনকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে কুশাখালী ইউনিয়নের কালীবৃত্তি নতুন বাজার এলাকায় হুমায়ুন কবিরের ফার্মেসিতে যান ড্রাগ সুপার সুশীল কুমার ঢালী। হুমায়ুন কবিরের ফার্মেসীতে ড্রাগ লাইসেন্স না থাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ভয় দেখিয়ে লাইসেন্স করাতে বাধ্য করেন তিনি।
এসময় আমির হোসেনকে ড্রাগ অফিসের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নগদ টাকা তার নিকট জমা দিতে বলেন ড্রাগ সুপার। পরে ড্রাগ সুপার সুশীল কুমার ঢালী অস্থানীয় কর্মচারী আমির হোসেনের মাধ্যমে লাইসেন্সের জন্য ২০ হাজার টাকা ঘুষও দাবী করেন। এতে নগদ ১০ হাজার টাকাও আমির হোসেনের কাছে প্রদান করেন ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবীর। তবে ঘুষের বাকী টাকাও দাবী করেন আমির।
ঘুষ দেয়ার পর দীর্ঘ কয়েক মাস পার হলেও লাইসেন্স না পাওয়ায় গেলো বছরের ২৮ ডিসেম্বর ড্রাগ অফিসে গিয়ে জানতে পারেন ড্রাগ সুপার সুশীল কুমার ঢালী অন্যত্র বদলী হয়ে গেছেন। এছাড়ও আউট সোসিং এর মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমির হোসেনকেও চাকুরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। হদিস নেই জমা দেয়া ফার্মেসির কাগজপত্রেরও। এতে ঘুষ দিয়েও লাইসেন্স না পাওয়ায় চরম হতাশায় পড়েন হুমায়ুন কবির।
লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, শুধু হুমায়ুন কবীরই নয়, কর্মচারী আমির হোসেনের মাধ্যমে বদলীকৃত ড্রাগ সুপার সুশীল কুমার ঢালী ওই এলাকার নতুন পুরনো সব ফার্মেসীকে লাইসেন্স ও নবায়ন দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে পালিয়েছেন। এতে চরম হতাশা ও ভোগান্তিতে পড়েছেন ড্রাগ লাইসেন্স প্রত্যাশী ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা।
ঘুষ নেয়ার বিষয়ে জানতে সদ্য বিদায় ড্রাগ সুপার সুশীল কুমার ঢালীর কাছে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর উত্তর তেমুহনী এলাকায় তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে একত্রে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছেন তিনি। এসময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে অন্যদিকে হাটা শুরু করে।
এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়ে নিজের ঘুষ নেয়ার বিষয় অস্বীকার করে দ্রুত দূরপাল্লার বাসে উঠে পালিয়ে যান অভিযুক্ত ড্রাগ সুপার। তবে অভিযুক্ত আউট সোসিং কর্মচারী আমির হোসেন বলেন, তিনি ঘুষের কোন টাকা নেন নি। তার বিরুদ্ধে একটি চক্র অপপ্রচার চালাচ্ছে।
দন্তের বিষয় জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, বিষয়টি উভয়পক্ষ থেকে শুনেছি। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। অভিযোগকারীকে অভিযুক্ত ড্রাগ সুপার হুমকি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা না বলে চলে যান।
এ ব্যাপারে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা ড্রাগ সুপার ডালিম চন্দ্র দাস বলেন, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ পূর্বের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আমি নতুন এসেছি। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
এএজেড