প্রাণীশূন্য হচ্ছে বকশীগঞ্জের গারো পাহাড়ের বনাঞ্চল
সীমান্ত ঘেঁষা বকশীগঞ্জের নয়নাভিরাম গারো পাহাড়ের বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলে মোট বনভূমির পরিমাণ ২৭০০ একর। বিশাল এই বনাঞ্চলে ২০ বছর আগেও দেখা মিলত বাঘ, ভালুক, বানর, হাতি, হরিণ ছাড়াও অজস্র পশু-পাখির। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন সেসব অতীত। এই বন এখন বলতে গেলে প্রাণীশূন্য। কালেভদ্রে ক্ষণিকের জন্য আগমন ঘটে ভারতীয় বন্যহাতির।
বকশীগঞ্জের কামালপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা দিঘলাকোনা এলাকার বাসিন্দা পুদি মারাক বলেন, ‘আগে এই বনে বাঘ, ভালুক, হাতি, শুয়োর, বানরসহ বহু প্রাণী ছিল। কিন্তু ২০ বছর ধরে কিচ্ছুই নেই। পুরো বন খুঁজলে একটা ইঁদুরও পাওয়া যাবে না।’
পাহাড়ি এলাকা সাতানিপাড়ার বাসিন্দা নপু মারাক নপ্তরীও বলেন, ‘আগে আমরা বন্যপ্রাণীর ভয়ে সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হতাম না। এখন এত বড় একটা বনে কিছুই নেই। আগে সবকিছু আছিল। এটা প্রকৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবাধে বৃক্ষনিধন ও বন ধ্বংসের কারণে এই বনাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট। অবৈধভাবে বন দখলের কারণে আবাসের জায়গা না থাকায় বন্য পশু-পাখিরা পাড়ি জমিয়েছে অন্যত্র।
দিঘলাকোনা এলাকার জয় দাংগো বলেন, ‘মা-বাবার কাছ থেকে শুনছি এখানে সিংহও ছিল। কিন্তু বন ধ্বংস ও অবাধে বৃক্ষনিধনের কারণে বর্তমানে কোনো পশু-পাখি নেই। প্রাণীশূন্য এই বিশাল বন।’
লাওচাপড়া এলাকার ফারুক মিয়া বলেন, ‘এই বনে পশু-পাখির কোনো খাবার নেই। থাকার কোনো জায়গা নেই। পশু-পাখি কীভাবে থাকবে? কী খাবে? এর জন্য পশু-পাখি আমাদের লাওচাপড়া বন বিভাগে নেই। সব পশু-পাখি ভারতে চলে গেছে।’
বিশাল এই বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণী না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে প্রাণ, প্রকৃতি ও রূপবৈচিত্র্য। দ্রুত এসবের কারণ উদঘাটন করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জনপ্রতিনিধিদের।
লাওচাপড়া এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য ছামিউল ইসলাম বলেন, ‘বন্যপ্রাণী না থাকার কারণে পরিবেশ আজকে হুমকির মুখে চলে গেছে। পরিবেশের ভারসাম্য নেই।’
বকশীগঞ্জের ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি পিটিশন সাংমা বলেন, ‘আমাদের এই বনকে আরও উন্নত করা দরকার। প্রাণীগুলো কী কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তা বন বিভাগের খুঁজে বের করা দরকার।’
এ বিষয়ে বালিজুড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বনে পশু-পাখির আবাসস্থল উন্নয়নের জন্য প্রায় সাড়ে চারশ একর বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির চারা দিয়ে বাগান সৃজন করেছি। এখানে বাঁশ আছে, যেটা হাতির খাদ্যের উপযোগী। সর্বোপরি দেখা যাচ্ছে, এসব বাগানে এখন অলরেডি বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি আসছে এবং হাতি অবস্থান করছে। পাখির কলকাকলিতে মুখর হচ্ছে ওই এলাকা। সামনে আরও ২৫০-৩০০ একর জায়গায় বনায়ন করার উদ্যোগ রয়েছে শুধু বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নের জন্য।’
এসএন