তীব্র শীতে সিরাজগঞ্জে বাড়ছে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়ার প্রকোপ
তীব্র শীত, হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় সিরাজগঞ্জে বেড়েই চলছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শাসকষ্ট রোগীর সংখ্যা। এক সপ্তাহে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ৪২০ জন ডায়রিয়া ও ৬৪ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে শিশুসহ নানা বয়সী রোগী। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।
এদিকে অতিরিক্ত রোগীর চাপ হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এতে শয্যা খালি না থাকায় অনেকে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। অভিভাবকরা সচেতন হলে এই রোগ থেকে শিশুদের সহজে রক্ষা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪, কাজিপুরে ১৩, রায়গঞ্জে ৫৭, তাড়াশে ৩০, উল্লাপাড়ায় ৬২, বেলকুচিতে ৪২, শাহজাদপুরে ২২, কামারখন্দে ১৩০ ও সদর হাসপাতালে ৫০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। সাত দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৬৪ জন। যাদের অনেকের বয়স এক থেকে দেড় বছর।
রায়গঞ্জ উপজেলা থেকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আল্পনা বেগম জানান, তার সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে দুই দিন চিকিৎসা শেষে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তার সন্তান অনেক ভালো রয়েছে।
বেলকুচি উপজেলার চালা গ্রামের হামিদ শেখ বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। চিকিৎসা চলছে। পাতলা পায়খানা কমে নাই। চিড়া আর স্যলাইনের পানি খাচ্ছি। শরীরে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। এখন একটু ভালো আছি।
সেবা নিতে আসা শহরের বাহিরগোলা মহল্লার কহিনুর বেগম জানান, তিন দিন আগে মেয়ের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। প্রথম দিন শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে মেয়ের। এখন অবস্থা কিছুটা ভালো।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল
হাসপাতালের সিনিয়র নার্স জীবন্নাহার জানান, এক সপ্তাহ ধরে ৫০ জন ডায়রিয়া এবং ৩৬ জন নিউমোনিয়া রোগী ভর্তি রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ভর্তি হয়েছে ১০ জন। ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যারা রোগীর কাছে থাকেন তারা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর খাওয়া-দাওয়া করার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেজ্ঞ ডা. মেহেদি হাসান বলেন, রাত ও দিনে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ধুলাবালিও এ রোগ বৃদ্ধির কারণ। শিশুদের এ থেকে রক্ষায় ঠাণ্ডা এবং গরম থেকে সতর্ক রাখতে হবে। এ ছাড়া ধুলাবালির সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া ওয়ার্ডের সংখ্যা ৪০টি। এতে সিটের স্বল্পতা থাকার কারণে ডাক্তাররা পরিস্থিতি ঠিকমতো সামাল দিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে হাসপাতালের পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে রয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, তীব্র শীতের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। ঠাণ্ডার কারণে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তাদের সব সময় গরম পরিবেশে রাখতে হবে। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য সব সময় গরম খাবার খেতে হবে। কোনো সময় ঠাণ্ডা বা পচা-বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, এক সপ্তাহে তীব্র শীতই মূলত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার কারণ। তবে ঠাণ্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত মজুত আছে। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য কম্বলের ব্যবস্থা রয়েছে। এই রোগ থেকে শিশুদের রক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে।
এসআইএইচ