উত্তরাঞ্চলে কনকনে ঠান্ডায় অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ
পৌষের মাঝামাঝিতে দেশজুড়ে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। তবে সবচেয়ে নাকাল অবস্থা উত্তরাঞ্চলের মানুষ। বেশি বিপদে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর ও কম আয়ের মানুষ। ঠাকুরগাঁওয়ে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া দিনজাপুরে ১০ দশমিক ৫ ও কুড়িগ্রামে ১২ ডিগ্রি সেরসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ-এর ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর প্রতিনিধির পাঠানোর তথ্যে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
দেশের উত্তর জেলা ঠাকুরগাঁও হিমালয়ের অনেক কাছে হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা প্রতি বছরই বেশি হয়। ডিসেম্বরের শুরুতে শীতের তীব্রতা শুরু হলেও মাসের শেষ থেকে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন ধরে অব্যাহত শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সূর্য পশ্চিমদিকে হেলে পড়লেই বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে পুরো জেলা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও বিকালের পর থেকে আবারও বাড়ছে শীত। ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছে শিশু ও বয়স্করা।
আবহাওয়া অফিসের সূত্র মতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই জেলায় কখনো সারাদিন ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে আবার কখনো চলছে হালকা রোদের আশা-যাওয়ার ভেলকিবাজি। গত চারদিন ধরে এখানে দিনের বেলায় কিছু সময় সূর্য দেখা গেলেও বাতাস শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। রাতের বেলায় বৃষ্টির মতো টপটপ করে কুয়াশা ঝরছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, গত কয়েকদিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। গতকাল শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে রয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। হাড় কাঁপানো শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। অনেকেই ছুটছেন ফুটপাতে গরম কাপড়ের খোঁজে। শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণে প্রতিদিনই ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে শীতজনিত রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাই শিশু ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ তাড়াতাড়ি শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মেলায় কনকনে ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন জেলার চরাঞ্চলের কৃষক ও খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা। এ অবস্থায় ঠান্ডায় ঠিকমত মাঠে কাজ করতে পারছেন না। এতে ব্যাহত হচ্ছে এখানকার জীবনযাপন। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুগুলোও ঠান্ডায় ভুগছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন ঠান্ডাজনিত রোগে। শহরে ঘনকুয়াশার কারণে দেরি করে ছাড়ছে ট্রেন ও নৌযানগুলো। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে বাস, ট্রাকসহ সড়কপথের যানবাহন।
কৃষি শ্রমিক আহেদুল ইসলাম ও কাসেম আলী বলেন, এত ঠান্ডায় মানুষ তো বিছানা থেকে উঠে নাই, আর আমরা কাজের জন্য মাঠে যাচ্ছি। এই ঠান্ডায় কাজ করতে একদম মন চায় না।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর ও ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, তাদের প্রতিটি ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল। শীতে এখানকার মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে। এখানে কম করে হলেও ৫-৬ হাজার দুঃস্থ ও অসহায় মানুষ আছে। ওই ইউনিয়নে সরকারিভাবে ১ হাজার ৫০০ কম্বল বরাদ্দ পাওয়ায় তা বিতরণ কাজ সমাপ্ত করেছেন। এখনো অনেক মানুষ কম্বল পায়নি। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
কুড়িগ্রাম জেলা রাজারহাট উপজেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুহিন মিয়া জানান, শনিবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামনে দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও কমবে বলে জানান তিনি।
উত্তরের জেলা দিনাজপুরের হিলিতে জেঁকে বসেছে শীত। বিপাকে পড়েছে নিম্নের মানুষজন কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না।
আজ শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই চারপাশ ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল। বেলা বাড়লেও কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। তবে সকালে যে পরিমাণ কুয়াশা ছিল তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
শীতের কারণে কাজে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। শীতে জ্বর-সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
দিনমজুর রায়হান ইসলাম বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠতে খবু কষ্ট হয় তারপরও আমি মানুষের দোকানে কাজ করি তায় উঠতে বাধ্য হয়েছি। কয়েক দিন ধরে খুব ঠান্ডা পড়েছে। এতে কাজে যেতে পারছি না। যে পরিমাণ কুয়াশা ঝরছে, তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষ কাজে যেতে না পেরে বিপদে পড়েছে।
দিনাজপুর জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দিনাজপুরে গতকাল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ তা কমে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমেছে।
এসএন