সুনামগঞ্জে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, বিপাকে হাওরের কৃষক

সুনামগঞ্জে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একদিনে হাওর-বিলে নেই ঘাস, অন্যদিকে দানাদার খাবারের দামও চড়া। তাই গবাদি পশুর খাদ্যের যোগানে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। কেউ কেউ খাদ্য যোগানে ব্যর্থ হয়ে কম দামেই গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা।
হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের লাখো মানুষের জীবিকার অন্যতম অবলম্বন গৃহপালিত গবাদি পশু। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে দেশীয় জাতের ২ থেকে ১০টিরও বেশি গরু। সারা বছর এসব গবাদি পশুকে হাওরে ও খোলা মাঠে ঘাস খাওয়ানো হয়। এ ছাড়া আমনের খড় ও বোরো ধানের খড় দিয়েই চাহিদা মেটান গৃহস্থরা। এসব গরু ও গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চলে হাওরাঞ্চলের হাজারো কৃষকের।
কিন্তু চলতি বছরের ১৬ জুন টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের সব নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যার ভয়াবহতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এতে জেলার মানুষ ও বাড়িঘরের যেভাবে ক্ষতি হয়েছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গবাদিপশু। ঘাসের জমি ও ঘরে তোলা বোরো ধানের খড় বন্যার পানিতে ডুবে পচে গেছে, আবার কারও গো-খাদ্য ‘খড়’ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তাই জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্যাভাব।
এর সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িছে খড়, কুঁড়া, ভুসি ও নেপিয়ার ঘাসের দাম। এ কারণে চরম বিপাকে পড়েছে গৃহপালিত গবাদিপশুর মালিকরা। এখন যত্নের গাভিদের বাঁচাতে নানা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গৃহস্থরা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কোরবান নগরের নুর মিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গরুর খানির অভাবে আগে যে গরু ৬০ হাজার টাকা দাম হইছে বর্তমানে এই গরু বাজারে নিয়া তুললে ৩৫ হাজার টাকা দাম হয়। গরু আগের থেকে এখন অনেক দুর্বল খানির অভাবে। হাওরে ফুক (পোকা) আইছে, ফুক আইয়া ঘাস খাইলিছে। ঘাস এখন নাই হাওরে। এমনকি আমনের ধান খেয়ে ফেলছে বলে জানান এই কৃষক।
এসময় তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, এখন যদি সরকার ওষুধ (সার) পাইতাম তাইলে ঘাসটা একটু বলাইতে (বাড়াতে) পারতাম।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেখা যায়, গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় খড়, কুঁড়া, ভুসি ও ঘাসসহ সবকিছুই অতিরিক্ত দামে কিনে গরু লালন-পালন করছেন। আবার গো-খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় অনেকে কিনেও খাওয়াতে পারছেন না। কেউ কেউ কচুরিপানা, লতাপাতা, তরকারির খোসা, ফেলে দেওয়া শাক কুঁড়িয়ে এনে খাওয়াচ্ছেন।
মাইজবাড়ি এলাকার আরে কৃষক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা যারা কৃষকরা আছি, আমরা বহুত মছিবতের মাঝে আছি। প্রথম আমরা বৈশাখী ধান তুলতে পারছি না। বন্যার পানি আইয়া সব ধানরে বাজিয়ে নষ্ট করিলাইছে। যাও আমরা ধানরে তোইল্লা রাখছিলাম, পরে আবার ধানের দাম গেলে কইম্মা, ৮০০ টাকা মণ, সাড়ে ৭শ টাকা মণ। এখন যে আমন ধান লাগাইছি এইগুলো তো এখন গরুরে খাবানি লাগে। নাইলে গরুর পালা মশকিল হই যাইব। হাওরে ঘাস নেই, অন্যদেকে খড়ও নেই আর যেখানে খড় পাওয়া যায় সেখান থেকে চড়া দামে কিনতে হয়।
সুনামগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসেব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় মোট ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৭টি গরু রয়েছে, মহিষ ২১ হাজার ১১২, ছাগল রয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯১ ও ভেড়া রয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৫টি।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ রয়েছে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার। চিকিৎসকের জন্যও অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। আমবাড়ি বাজার এলাকার কৃষক মোহাম্মাদ ময়না মিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সুনামগঞ্জ পশু হাসপাতালের মধ্যে গরু লুইয়া গেলে, আটাইলের ওষুধ আনলে, অন্তত ২০ টাকা, ৩০ টাকা, ৫০ টাকা ঘুষ দিয়া আটাইলের ওষুধ আনা লাগে। হাসপাতাল দুপুর ১২টার আগে খোলা হয় না বলে অভিযোগ তার।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মাদ আব্দুল আওয়াল ভূইয়া বলেন, গবাদি প্রাণীর খাদ্য সংকট দূর করার জন্য, আমাদের অফিসে জার্মান ঘাস, যেটা পানি সহনশীল আমাদের এখানে বীজ আছে, অনেক খামারি ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখান থেকে নিয়ে তাদের এলাকায় জার্মান ঘাস চাষ করছে। আপতকালীন সময়ে গবাদিপশুর গো-খাদ্যের ঘাটতি পূর্ণ করা যায় সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এসজি
