সন্তানের অবহেলায় ভিক্ষুক মা

সন্তান কোলে থাকতেই স্বামী মারা যায় কুলসুম বেগমের (৭০)। দিন রাত কষ্ট করে কোলে পিঠে করে সন্তানকে বড় করে তোলেন কুলসুম। কিন্তু ভাগ্য আর বদলায়নি বরিশাল নগরীর কাশিপুরের এই নারীর।
সত্তর বছর বয়সে এসেও কাগজ, বোতল সংগ্রহ এবং ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করতে হচ্ছে কুলসুম বেগমকে। বর্তমানে বরিশাল নগরীর ভাটার খাল এলাকায় একটি ঘরের পাশে ছোট একটি আস্তানা বানিয়ে থাকেন তিনি।
বরিশাল নদীবন্দর এলাকায় ভিক্ষা করতে দেখা যায় কুলসুম বেগকে। দুপুরে খাবারের জন্য হাত পেতেছেন অন্যের কাছে। অনেকে আবার তাচ্ছিল্য করে সরিয়ে দিচ্ছেন। তীব্র শীতে পাতলা একটি কাপড় পরেই জীবনের তাগিদে ভিক্ষা করে চলছেন তিনি। এভাবে সারা দিন কাগজ ও বোতল সংগ্রহ করে বিক্রি এবং ভিক্ষা করে যা আয় হয় তা দিয়ে জীবন চালিয়ে নেন।
ছেলে দিনমজুর মোস্তফা (৩৫)। নগরীর বিভিন্ন যায়গায় দিনমজুরের কাজ করে ভালো আয়-রোজগার করে মোটামুটি চলছে তার সংসার। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। তার অবহেলায় এক মুঠো ভাত জোটে না মায়ের কপালে। বয়স বাড়ায় রোগে বাসা বেঁধেছে কুলসুমের শরীরে। তবুও অসুস্থ শরীরে ভিক্ষা করেই কুলসুম বেগম জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
কুলসুম বেগম সন্তানের উপর অভিমান করে বলেন, ‘মা এহন বুড়া হইয়া গেছে হেরে লাগবো কোন কামে? এই, যে কয়দিন কাগজ টোহাইতে পারি হেই কয়দিন খামু। যহন কিছু করতে পারমু না চোখ বুইজ্জা মইরা যামু। মোর পোলায় যেন মোর মরা মুখ না দেহে।’
চোখে ছল ছল পানি নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মোর পোলায় মোরে ভাত কাপড় দেয় না। কত কষ্ট কইরা দুইডা ভাত জোগাড় কইরা খাই। মোর শরীরে আর শক্তি পাই না। জায়গা-জমি বেইচ্চা সব ট্যাহা লইয়া গেছে পোলায়। মুই এ বুড়া কালে আর কষ্ট চাই না।’
সারা জীবন শ্রম দিয়ে আর কষ্ট করে সংসার আগলে রেখেছিলেন কুলসুম বেগম। কিন্তু জীবনে একটু সুখও পাননি। শুধু পেয়েছেন লাঞ্চনা আর বঞ্চনা। জীবনের শেষ সময়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন বৃদ্ধা এই মা। দিনমজুর ছেলে খোঁজ খবর রাখেন না মায়ের।
এসও/এএন
