ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামী করে আদালতে বিএনপির মামলা!
ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ায়-বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথী সেন, সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ (চিকন বাবু) ও ২০নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সেন সহ ৬৯ জনকে আসামী করে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঠাকুরগাঁও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৩সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গুম, খুন, হত্যা, সার জ্বালানী, তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির প্রতিবাদে রুহিয়া থানা বিএনপি আয়োজিত মিছিল ও সমাবেশ সফর করতে লোকজন মিছিল নিয়ে আসার সময় বর্ণীত আসামীরা রামনাথ বাজার (এমপি মোড়) এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সভাস্থলে আসতে বাঁধা সৃষ্টি করে লাঠি সোটা নিয়ে বিএনপি কর্মীদের উপর হামলা চালায় ও রাস্তা দিয়ে আসা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ক্ষতি সাধন করে।
এ সময় আসামীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বাদী আনছারুল হক গুরুতর আহত হন। পরে ২০নং রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন বিএনপি কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। উক্ত অভিযোগে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৬৯ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে।
অপরদিকে, বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাসা ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় ২০জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০জনকে আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে নওশাদ আলী (৪৩) ও ইসমাঈল হোসেন (৫২) নামে দুইজন আসামীকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। আর বিএনপির দায়েরকৃত মামলা তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ওসি রুহিয়া থানাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মামলার এজাহার থানায় পৌছায়নি।
থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথী সেনের দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, দেশব্যাপী বিএনপি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শনিবার (৩সেপ্টেম্বর) বিকেলে রুহিয়া থানা মহিলা আওয়ামীলীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ভন্ডুল করতে মরিয়া হয়ে উঠে বিএনপি। ওই দিন দুপুর ৩টায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হকের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের একদল যুবক হাতে লাঠি-সোটা লোহার রড, হকিষ্টিক, রামদা,আগ্নেয়াস্ত্র সহ বে-আইনী অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ত্রাস ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এর বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেএম অটো রাইস মিলে হামলা চালায়। আসামীরা উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিস ঘরের দরজা জানালা ভাঙচুর করে বাসার ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। আসামীরা নৈরাজ্য চালিয়ে প্রায় একলক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে।
এবিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক সাথে কথা বললে তিনি জানান, গত শনিবার রুহিয়ায় আমাদের সমাবেশ ছিলো। সমাবেশে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের আসতে বাঁধা প্রদান করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আমি নেতাকর্মীদের আনতে গেলে রামনাথ বাজারে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আমার উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় আমার মাথা ফেটে যায়। আমাদের বেশ-কয়েকজন কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের পার্টি অফিস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৬৯ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছি।
অন্যদিকে রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারর্থী সেন বলেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক পরিকল্পিতভাবে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি সাহেবের বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলা চালিয়ে সম্পদের ক্ষতি সাধন করেছে ও লোকজনকে আহত করেছে। এখন নিজেরা বাঁচতে আমাদের লোকজনকে হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
এব্যাপারে রুহিয়া থানার ওসি সোহেল রানা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, বিএনপির দায়েরকৃত মামলার কপি এখনো পাইনি। পেলে নির্দশনা মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারর্থী সেন এর দায়কৃত মামলায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এএজেড