রংপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক, আটক ৪
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন এবং বিএনপি ও ছাত্রদলের ৪ নেতাকে আটক করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টা থেকে শুরু হয়ে দেড় ঘণ্টাব্যাপী পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে গুম, খুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন পুলিশের গুলিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবুর নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের মোড় হয়ে টাকোয়া মসজিদের সামনে সড়কে সমাবেশে যোগ হয়। সমাবেশে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি, লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে পুলিশের এস আই সালামসহ ১৫ পুলিশ সদস্য, ৪ সাংবাদিক, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবু, সাধারণ সম্পাদক আখিরুজ্জামান শিরন, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নেওয়াজ জোহা, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন লিজুসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে সরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জিরো পয়েন্টের কাছে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা বিএনপির ধ্বংসাত্মক রাজনীতির সমালোচনা করে বলেন, তারা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত গঙ্গাচড়াকে রণক্ষেত্র বানিয়েছে। এরপর তাদের যেকোনো কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা হবে।
এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাবু বলেন, বুধবার থানার ওসির সঙ্গে কথা হয়েছে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করব। কিন্তু পুলিশ সমাবেশ চলাকালে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে দলের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ছাড়া যুবদল নেতা রাশেদকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া থানার ওসি মো. দুলাল হোসেন জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভের নামে পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ৫ পুলিশকে আহত করেছে। পুলিশের উপর চড়াও হয়ে তারা দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে।
এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি ও ছাত্রদলের ৪ নেতাকে আটক করে। তারা হলেন- বিএনপি নেতা মাহবুব আসিফ, ছাত্রদল নেতা সিন্দিদ, অয়ন ও নয়ন।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান মিলন জানান, পুলিশ বিএনপি ও ছাত্রদলের ৪ নেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে জানালেও তাদের নাম জানায়নি গঙ্গাচড়া থানার ওসি।
রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন রায়হান বলেন, বর্তমানে গঙ্গাচড়ার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গঙ্গাচড়া বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গঙ্গাচড়া থানার ওসিসহ ১৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কারও মাথা ফেটে গেছে, কারও হাত-পা কেটে গেছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজি