জনবল ও শয্যা সংকটে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ, পিরোজপুরসহ আশপাশের জেলা এবং উপজেলার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ২০১৪ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যা থেকে ১০০০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ঘোষণার দীর্ঘ আট বছরেও বাড়েনি এর প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা ও জনবল।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন পরও হাসপাতালটির শয্যা ও জনবল বাড়েনি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রতিদিন এখানে রোগী ভর্তি থাকছে ১৪শর বেশি। বর্হিবিভাগে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছেন অন্তত ১২শ রোগী। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল এবং শয্যা না থাকায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরিবিভাগ সবখানে রোগীর চাপ। মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক, গাইনি সব বিভাগে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী। শয্যা সঙ্কুলান না হওয়ায় ঠাঁই নিতে হচ্ছে মেঝেতে।
রোগীর চাপ সামলে অস্ত্রোপচার জটও কমাতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ভর্তি থাকা রোগীদের মাসের পর মাস অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে আসা খুলনার তেরখাদা উপজেলার সাচিয়াদহ গ্রামের রহিমা খাতুন জানান, শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রহিমা জানান, ‘তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড, প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি সবই আছে। কিন্তু এগুলো বদ্ধকক্ষে বস্তায় মোড়ানো। দশ বছর ধরে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকলেও কখনও অস্ত্রোপচার হয়নি। জ্বর আর মাথা ব্যথার ওষুধ ছাড়া কিছুই দেওয়া হয় না। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।
কিডনিতে সমস্যা নিয়ে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার মাইলমারা এলাকার প্রমথ সরকার ভর্তি হয়েছেন এখানে। প্রমথ বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিট দেবে কীভাবে? আমার চেয়েও খারাপ অবস্থার রোগী সিটের জন্য আবেদন করে মেঝেতে আছে। তাদেরই সিট মিলছে না। হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানো খুব দরকার।’
নড়াইলের লোহাগড়ার জাকারিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে খুলনার এ হাসপাতালে এসেছিলেন নভেম্বরের প্রথম দিকে। পায়ের চামড়া রিপ্লেসমেন্টের তারিখ পড়লেও চিকিৎসক সংকটে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি বলে জানান তিনি। বাধ্য হয়ে খুলনার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালের প্রশাসনিক দপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে ২৮৫টি চিকিৎসক পদের ১৩৪টি শূন্য। অবেদনবিদ (আইসিইউ) ৬টি পদের সবগুলো শূন্য। দীর্ঘদিনেও হাসপাতালটিতে পরিসংখ্যানবিদ, রেকর্ডকিপার ও অফিস সহকারী পদ নেই। তৃতীয় শ্রেণির ৪৮টি পদের ১৩টি, চতুর্থ শ্রেণির ১০৯টি পদের বিপরীতে ২৯টি শূন্য রয়েছে। এ বিশাল শূন্য পদ নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করা কঠিন বলে মন্তব্য করেছে কর্তৃপক্ষ।
প্রশাসনিক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে তিনটি অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি)। এরমধ্যে একটি জরুরি সেবা। বাকি দুটির একটি সিজারিয়ান এবং অন্যটি সাধারণ অস্ত্রোপচারের জন্য। ওটির অবেদনবিদ চিকিৎসকের ১০টি পদের সাতটিই শূন্য। প্রতিসপ্তাহে একদিন একেক বিভাগের অস্ত্রোপচার করা হয়। কোনো বিভাগের নির্ধারিত দিনে সরকারি ছুটি থাকলে সে সপ্তাহে আর অস্ত্রোপচার সম্ভব হয় না।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালটির শয্যা ৫০০টি। প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে ১১-১২শ। ৫৩ শতাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য। অন্য স্টাফের পদ শূন্য রয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি। এত কম জনবল নিয়ে শয্যার আড়াইগুণ বেশি রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসক পদায়নের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠাই।’
/এএন