নতুন বছর নিয়ে যা ভাবছেন বরিশালের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা
শেষ হলো আরও একটি ঘটনাবহুল বছর। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বহু খতিয়ানে ভরা ছিল ২০২১ সাল।
শুরু হচ্ছে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের নতুন বছর-২০২২। গত বছরের পাওয়া না পাওয়ার স্মৃতি ভুলে নতুন বছরে নতুন আশা বরিশাল নগরবাসীর। সেই ভাবনায় আছেন বরিশালের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরাও। নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশায় তাদের ভাবনা নিয়ে ঢাকাপ্রকাশের এই বিশেষ আয়োজন।
একেএম জাহাঙ্গীর
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর ২০২২ সালে দল নিয়ে তার ভাবনার কথা জানিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশকে। একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি জানান, বর্তমানে বরিশাল আওয়ামী লীগ স্বচ্ছতার সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের কর্ম তৎপরতা বজায় রেখেছে। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালনা করছেন সাংগঠনিক কার্যক্রম। যা দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে প্রতিনিয়ত।
একেএম জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন। তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, সংগঠনের ভবিষ্যত কর্ণধার। নতুন বছরে আশা করি বরিশাল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব প্রদানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বজায় রাখার পাশাপাশি এর সঠিক ইতিহাস জাতির কাছে তুলে ধরবেন এমন প্রত্যাশা করছি।’ পরিশেষে নতুন বছরে মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বরিশালবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন এই রাজনীতিবিদ।
অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার
কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করার। আশা প্রকাশ করেছেন দেশের সব ধরনের সামাজিক ব্যাধি অবসানের।
ঢাকাপ্রকাশের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল। দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা গণতন্ত্রের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ করছি। নতুন বছরে প্রত্যাশা করছি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠার। সব দল মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবার।’ বরিশালবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকার সম্মতি প্রদান করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
প্রফেসর ড. সাদেকুল আরেফিন
নতুন বছরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য সুখবর দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সাদেকুল আরেফিন। বরিশালে সাংস্কৃতিক চর্চাকে আরও বেগবান এবং গবেষণালব্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা, নাট্যকলা বিষয়ক বিভাগ চালুর দাবি এখানকার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের। তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি জানান, বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে আরও এগিয়ে নিতে নাট্যকলা বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। একাডেমিক কাউন্সিলের সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপনের পর তা ইউজিসি বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে ববিতে নাট্যকলা বিভাগ পূর্ণতা পাবে বলে আশাবাদী তিনি।
গত বছরের করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বিষয়ে বাংলাদেশের গতিশীলতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, বর্তমানে করোনার নতুন ধরণ বিরাজ করছে। এ থেকে সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পালনে ঢিলেঢালা মনোভাব যেন ক্ষতির মুখে ফেলতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান তিনি। পরিশেষে করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন বছরে ববি শিক্ষার্থীদের আরও পরিশ্রমী হওয়ার পাশাপাশি কলুষতামুক্ত শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
অধ্যাপক শাহ শাজেদা
নতুন বছরে মহামারি করোনা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের আশা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’র সভাপতি ও বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক শাহ শাজেদা। নতুন বছরে তরুণ সমাজ রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসনসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ তথা দেশ গড়তে প্রত্যয়ী হবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন তিনি ঢাকাপ্রকাশকে।
পাশাপাশি সদ্য সমাপ্ত বছরে ধারাবাহিক সড়ক দুর্ঘটনা, বছরের শেষভাগে মর্মান্তিক নৌ দুর্ঘটনার বিষয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আগামীতে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনারোধে সংশ্লিষ্টরা আরও তৎপর হবেন বলে আশাবাদী তিনি। একইসঙ্গে নতুন বছরে নারী নির্যাতনের মতো কলুষতা থেকে মুক্ত সমাজ দেখতে চান তিনি।
দেবাশীষ চক্রবর্তী
বরিশাল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব দেবাশীষ চক্রবর্তী সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। নতুন বছর নিয়ে ব্যক্ত করেছেন তার ভাবনা। প্রথমেই করোনামুক্ত নতুন বছর শুরুর প্রত্যাশা জানিয়েছেন। আশা করছেন সকল সীমাবদ্ধতা, সংকীর্ণতা, অতিক্রম করে মানবতাবাদের মাধ্যমে মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হবে। ঢাকাপ্রকাশের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গন বর্তমানে খুব প্রতিষ্ঠিত। ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝেও যেন এই চর্চা ধরে রাখা যায় আমরা সেই চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার আরও বেড়েছে এই অঞ্চলে। তবে এই বিদ্যাপিঠে সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট বিভাগের অভাব রয়েছে। সংস্কৃতি চর্চা এবং গবেষণার জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক সংস্কৃতি, চারুকলা, নাট্যকলা এবং সংগীত বিষয়ক বিভাগ চালু করা আবশ্যক। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দৃষ্টি দিবেন বলে আশা করছি। পাশাপাশি নতুন বছরে বরিশাল সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে বরিশালবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা রইল।’
এসএম/এএন