মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ
কাপ্তাই হ্রদে টানা তিন মাস ১৭ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার মধ্যরাত থেকে (১৮ আগস্ট) মাছ ধরা শুরু হচ্ছে। রাত ১২টার পর থেকে নিয়ম অনুযায়ী হ্রদ থেকে মাছ ধরতে পারবে জেলেরা। এ দিকে দীর্ঘসময় পর মাছ ধরা শুরু হওয়ায় জেলে ও মাছ আহরণ এবং বিপননে জড়িত সকলে আবারো কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মৎস্য ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ সময় হ্রদের মাছ বাজারজাতকরণ ও স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ থাকে। হ্রদে নিষেধাজ্ঞা মানাতে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি বিএফডিসির মনিটরিং টিম দায়িত্বপালন করে। তবে বিগত তিন বছর ধরে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ার কারণে বিলম্বে মাছ আহরণ শুরু হয়েছে।
গত বছর পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় পুরো আগস্ট জুড়ে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা চারমাসে ঠেকেছে। এর আগের বছরও ১০ দিনে বাড়িয়ে ১১ জুলাই মধ্য রাত থেকে মাছ আহরণ শুরু হয়। কিন্তু এর আগের স্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। এবারো ৩ মাস ১৭ দিন পর শুরু হয়েছে স্বাদুপানির বৃহৎ জলাধার কাপ্তাই হ্রদে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে এখন ৯৫ দশমিক ৮৭ মীনস সী লেভেল (এমএসএল) পানি রয়েছে। হ্রদে পানির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএমএস। তবে ১০৫ এমএসএলের ওপর পানি বাড়লে স্লুইসগেইট পানি ছেড়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ দিকে পানি স্বল্পতার মধ্যেই মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় শুরুর দিকে বাড়তি মাছ আহরণের শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বুধবার মধ্যরাত থেকেই হ্রদে মাছ ধরার জাল ফেলছেন জেলেরা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই বিএফডিসির নিজস্ব পল্টুনগুলোতে মাছ নিয়ে আসবেন জেলেরা। সেখান যেগুলো যাবতীয় কার্যাদি শেষে বাজারজাতকরণ করা হবে। বিএফডিসি রাঙ্গামাটির কেন্দ্রের বিপণনকর্মকর্তা মো. শোয়েব সালেহীন জানান, ইতোমধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভোর থেকেই মাছ বাজারজাতকরণ শুরু হবে। দীর্ঘদিন পর মাছ ধরা শুরু হওয়ায় জেলেরা-ব্যবসায়ী সকলের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলাধার বলা হয় রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদকে। প্রায় ৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদটি রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত। মূলতঃ ষাটের দশকে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এই হ্রদের সৃষ্টি হলেও বর্তমানে স্বাদু পানিতে মৎস্য উৎপাদন ও সরকারের রাজস্ব আদায়ে ভূমিকা রাখছে এই হ্রদটি। সরকারি হিসাবে রাজস্থলী ও কাউখালী উপজেলা ব্যতিত হ্রদনির্ভর রাঙামাটির অন্য আট উপজেলা এবং খাগড়াছড়ির মহালছড়ি ও দীঘিনালা উপজেলার একাংশের জেলেরা হ্রদের ওপরেই জীবিকানির্বাহ করে আসছেন দীর্ঘকাল ধরে।
এএজেড