প্রচণ্ড দাবদাহে কুষ্টিয়ায় জনজীবনে অস্বস্তি
সারা দেশের সাথে পাল্লা দিয়েই গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়ায় বেড়েছে প্রচণ্ড দাবদাহ। এই গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন জেলার সাধারণ জনগণ। কোথাও মিলছেনা একটু স্বস্তি। স্বচ্ছল মানুষেরা গরম কিছুটা নিবারণ করতে সক্ষম হলেও খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়ে উঠছে না, তাদের ভরসা প্রকৃতি। গাছের নিচে কিংবা ছায়া শীতল পরিবেশই এসব মানুষের গরম নিবারনের একমাত্র অবলম্বন। এই তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে কুষ্টিয়া শহরের গা ঘেঁষা গড়াই নদী এবং বিভিন্ন পুকুরে নেমে দীর্ঘসময় অনেককে গোসল করতে দেখা গেছে। এই তীব্র গরমে জেলা জুড়ে বেড়েছে জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে এমন পরিস্থিতি চলতে পারে আগামী আরও ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত।
কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে ভ্রাম্যমাণ আখের রস, ঠাণ্ডা পানিয় ও লেবুর শরবত দোকানীদের বিক্রি বেড়েছে। ফলের দোকানেও বেড়েছে বিক্রি। কুষ্টিয়া শহরের ছয় রাস্তার মোড় এলাকার ভ্রাম্যমাণ লেবুর সরবত বিক্রেতা আব্দুল মজিদ জানান এই গরমে সরবত বিক্রি অনেকটা বেড়েছে, তবে গত ৪/৫ দিন হলো সরবত বিক্রি বেশি বেড়েছে।
কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডে ভ্যানে করে আনারস বিক্রি করেন মন্টু ব্যাপারী তিনি বলেন, আনারস রসালো ফল সে কারনে গরম বাড়ায় আনারসের চাহিদা একটু বেড়েছে। আগের তুলনায় এখন আনারস বিক্রি ভালো হচ্ছে। জেলার সাধারণ মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এই তাপদাহের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এর ফলে দিন মজুর শ্রেণির মানুষের সংসার চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের দিনমজুর মেহেদী শেখ জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত মাঠে কাজ করা যায় তার পর রোদের তাপ বেড়ে যায় এর ফলে মাঠে থাকা সম্ভব হচ্ছে। মাঠে পাট কাটা শুরু হয়েছে এভাবে চলতে থাকলে পাট কাটা খুবই সমস্যা হবে। উপরে রোদ নিচে কাঁদা পানি এভাবে কাজ করে অনেকেই জ্বর ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কুষ্টিয়া শহরের রিকশা চালক আলিফ হোসেন বলেন, এতো গরমে রিকশা চালাতে কষ্ট হচ্ছে, রাস্তায় লোকজন কম বের হচ্ছে দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মাত্র ৯০ টাকার ভাড়া পেয়েছি। এতো গরমে রিকশা চালানো নিজের শরীরেও কুলাচ্ছে না।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশীদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, শুক্রবার (১৫ জুলাই ) দুপুর ৩টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কাল বৃহস্পতিবার একই সময় তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এই তাপমাত্রাকে অতিরিক্ত হিসেবে ধরছি না। তাপমাত্রার কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে আমরা তাকে অতিরিক্ত তাপমাত্রাস হিসেবে ধরি। সে অনুযায়ী এখনকার তাপমাত্রা স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হচ্ছে। তবে আগামী তিন থেক চার দিনের মধ্যে তাপমাত্রা যেটুকু আছে এর মাত্রারাও আরও কমে যাবে।
এদিকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে অতিরিক্ত গরমে জ্বর, ডায়রিয়া, আমাশয় পেটের সমস্যাজনিত রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো আশরাফুল আলম ঢাকাপ্রকাশকে জানান, গরমে ডায়রিয়া রোগী কিছুটা বেড়েছে। বেশ কিছু রোগী পেটের সমস্যা নিয়ে কয়েকদিনে ভর্তি হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, গরমে যতটা পারা যায় রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে আর বেশি বেশি পানি, লেবুর শরবত, বেলের শরবত এবং খাবার স্যালাইন খাওয়া ভালো।
এএজেড