বরিশালে বড়দিন উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন আগামী শনিবার (২৫ ডিসেম্বর)। বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হবে। বরিশাল নগরীতেও সাড়ম্বরে বড়দিন উৎসব পালন করবেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা।
এই দিনে খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্ট বেথলেহেমে জন্ম নিয়েছিলেন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে যিশুর আগমন ঘটেছিল পৃথিবীতে।
দিনটি উপলক্ষে বরিশাল নগরের অক্সফোর্ড, ব্যাপ্টিস্ট এবং ক্যাথলিক চার্চে থাকছে নানা আয়োজন। প্রার্থনা, কীর্তন, বাইবেল পাঠ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন পালন করবেন ভক্তরা। শনিবার যীশুর জন্মদিন হলেও এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে শুক্রবার দিবাগত রাত থেকেই। রাতে নগরীর সদর রোডের ক্যাথলিক এবং সেন্ট পিটার্স চার্চে শুরু হচ্ছে বড়দিন ঘিরে মূল অনুষ্ঠান। এদিন খ্রিস্টের সকল ভক্তসহ তার অনুসারীরা প্রার্থনায় অংশ নেবেন।
খ্রিস্টের ভক্ত নগরীর কলেজ রোডের খ্রিস্টান পাড়ার বাসিন্দা বেনেডিক্ট রিগ্যান বৈরাগী বলেন, ‘সব ধর্মই মানবতা, প্রেম, সহমর্মিতা, অহিংসা শেখায়। তারা অতীতের পাপ মোচনের জন্য যীশুর কাছে প্রার্থনা করে। যীশু খ্রিস্টের জন্মদিনে প্রার্থনা করে তারা আগামী একটি বছর ভালোভাবে চলার অনুপ্রেরণা পান।
তবে বড়দিনে শুধু খ্রিস্ট ভক্তরাই নন, অন্য ধর্মের মানুষও আসেন চার্চের সাজসজ্জা দেখতে এবং উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। অনেকে পরিবারের নতুন প্রজন্মকে দেখাতে নিয়ে আসেন খ্রিস্ট ভক্তদের ধর্মীয় রীতিনীতি। অংশ নেন প্রীতি ভোজ সভায়। ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা বেঞ্জামিন হালদার এর বাসায় আগত অতিথিদের মধ্যে অনেকেই থাকেন মুসলিম ধর্মের।
আলাপকালে বেঞ্জামিন হালদার বলেন, ‘যীশু খ্রিস্ট বলেছেন, ইহলোকে নামুক শান্তি তার অনুগৃহীত মানবের অন্তরে। সেই বিশ্বাসকে ধারণ করেই বড়দিনের উৎসব পালন করছি। কে কোন ধর্মের সেটি বড় পরিচয় নয়, বড় পরিচয় আমরা সবাই মানুষ। এ উপলব্ধি থেকে অন্য ধর্মাবলম্বীরাও আমাদের আতিথ্য গ্রহণ করেন।’ বড়দিন উপলক্ষে বরিশাল নগরীর সবগুলো গির্জা সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। চার্চে শিশু যীশুর জন্মস্থান বেথলেহেম সিটির নাজারেত পাড়ার আদলে প্রতীকী গ্রাম সাজানো হয়েছে।
নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোড, কলেজ রো, নবগ্রাম রোডের গোল পুকুর পাড়, সাগরদী, কাশিপুর, মতাশার খ্রিস্টান কলোনিসহ খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে করা হয়েছে ব্যাপক সাজসজ্জা। সদর রোডের সেন্ট পিটার্স চার্চে শনিবার সকাল ৮টায় শুরু হবে প্রার্থনা অনুষ্ঠান। এখানে রেভারেন্ড অ্যালবার্ট হালদার প্রার্থনা পরিচালনা করবেন। তাকে সহযোগিতা করবেন বরিশাল ডায়োসিসের সিনিয়র বিশপ সৌরভ ফলিয়া। এরপর ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পীরা। প্রার্থনা শেষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিস্টান পরিবারগুলোতে থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। বসবে ধর্মীয় গানের আসর, চলবে যিশু খ্রিস্টের আরাধনা।
এদিকে বড়দিন পালন উপলক্ষে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আর্থিক অনুদান বিতরণ করেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বরিশালের ২৮ টি চার্চ ও এলাকায় বড়দিন আয়োজনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করে বিসিসি। অপরদিকে বড়দিনকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা না ঘটে সে লক্ষ্যে নগরের সবগুলো গির্জা এবং খ্রিস্টান পল্লীগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, বড় দিনের উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে বেশ কয়েকদিন আগে থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি। গির্জাগুলোও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে পেট্রোলিং এবং চেকপোস্টের কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। উৎসব পালনকালে সংশ্লিষ্ট গির্জাগুলোতে নিয়মিতদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।’ সর্বজনীন উৎসব নির্বিঘ্নে পালনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নগরবাসীও সমান ভূমিকা পালন করছেন বলে জানান বিএমপি কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।
এসএম/এএন