বিশ্ব ইজতেমা: মুসল্লিদের পদভারে মুখর তুরাগ তীর
ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামীকাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পর শুরু হতে যাচ্ছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। তবে মূল কার্যক্রম শুরুর আগেই ইজতেমা ময়দান পরিপূর্ণ হয়ে গেছে মুসল্লিদের পদচারণায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আম বয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।
ইজতেমা উপলক্ষে বুধবার থেকেই মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা তাদের নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। আগামীকাল থেকে প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলে মুসল্লিদের ঢল আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবারের বিশ্ব ইজতেমা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামের অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি এবং ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে।
প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছেন ৪১টি জেলার মুসল্লিরা, যার মধ্যে রয়েছে ঢাকাসহ গাজীপুর, টঙ্গী, মিরপুর, কাকরাইল, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, ফরিদপুরসহ অন্যান্য জেলা। ইতোমধ্যেই ৫০টিরও বেশি দেশের মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেছেন এবং তাদের জন্য নির্ধারিত কামরায় অবস্থান করছেন।
বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন, মাঠজুড়ে ৩৩৫টি সিসি ক্যামেরা, ১৬টি ওয়াচ টাওয়ার, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড এবং ড্রোনের মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া ইজতেমা এলাকায় ২০টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, ওজু ও গোসলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ৯ হাজার পাকা টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ডেসকো, তিতাস গ্যাসসহ বিভিন্ন সংস্থা ইজতেমা ময়দানে নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
ইজতেমার নির্বিঘ্ন আয়োজনের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আখেরি মোনাজাতের দিন ইজতেমা এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। মুসল্লিদের যাতায়াত সুবিধার জন্য প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
প্রথম দুই পর্ব শেষ হওয়ার পর আটদিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাদপন্থীদের ইজতেমা শুরু হবে, যা ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে।
বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে তুরাগ তীর এখন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সারাবিশ্বের মুসল্লিরা এখানে একত্রিত হয়ে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।