সাপাহারে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ-চাষিরা
নওগাঁ সাপাহার উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম হাপানিয়া। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। সরিষাক্ষেতগুলোর পাশে বসানো হয়েছে মৌ-চাষের বক্স। আর এই সরিষা ফুলের সুমিষ্ট মধু সংগ্রহের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে এসেছেন মৌ-চাষিরা। মাঠের মাঝে মৌ-বক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ-চাষিরা। চলতি বছরে গ্রামটিতে কোটি টাকার মধু বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
সাপাহার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৩৬০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তার মধ্য হাপানিয়া গ্রামের বাইরে থেকে আসা চারজন মৌ-চাষির মোট ৩৮০টি মৌবক্সে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন সম্ভব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশের টাঙ্গাইল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারজন মৌ-চাষি এসেছেন উপজেলার হাপানিয়া ও কৃষ্ণসদা গ্রামে। মোট ৩৮০টি মৌ-বক্সে পৃথক দুটি স্থানে মৌ-চাষ করছেন তারা। এই এলাকার মাটির গুণগত মান অনেক ভালো। এখানকার সরিষা ফুলের মধু অন্যান্য জায়গার তুলনায় সুমিষ্ট। যার ফলে মৌ-চাষিরা মধু সংগ্রহের জন্য এই অঞ্চলকে বেছে নিয়েছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছরে তুলনামূলকভাবে বেশি লাভবান হবার স্বপ্ন দেখছেন মৌ-চাষিরা।
মৌ-চাষি জিয়াউর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমি শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মধু সংগ্রহ করি। বর্তমানে এই জায়গায় অন্যান্য এলাকার তুলনায় সরিষার চাষ অনেক বেশি। পলি মাটির পরিমাণ বেশি থাকায় ফুলের মান ভালো। মধু অনেক মিষ্টি হবে আশা করছি। আমি ৭৫ টি মৌ-বক্স নিয়ে এসেছি। আরো মৌ-বক্স আনার প্রক্রিয়া চলছে।
অপর মৌ-চাষি কামাল হোসেন মিঠু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমাদের প্রতিটি মৌ-বক্সে ৮টি প্লেট থাকে। আমরা মোটামুটি দেড় মাসের মতো অবস্থান করবো। এই সময়ের মধ্যে ৫বার মধু সংগ্রহ করা হবে। প্রথম ও শেষবারে মধু তুলনামূলক কম সংগ্রহ হয়। কিন্তু মাঝের তিনবার পর্যাপ্ত পরিমাণে মধু সংগ্রহ সম্ভব। এছাড়াও এই অঞ্চলের সরিষা ফুলের মান ভালো হবার ফলে তুলনামূলকভাবে বেশি মধু সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মনে করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছরে এই অঞ্চলে মধু চাষ করে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি লাভবান হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যান্য মধু চাষিরা বলছেন, তারা নিজস্বভাবে এই মৌ-চাষ করেন। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা সহ উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে তারা মৌ-চাষে আরো উন্নতি করতে পারবেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার প্রামানিক ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, বাইরে থেকে আসা চারজন মৌ-চাষির মোট ৩৮০টি মৌবক্সে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন সম্ভব। যা ৩৫০টাকা কেজি দরে বিক্রয় করলে দেড়মাসে প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকার মধু বিক্রয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, আমরা স্থানীয়ভাবে মৌ-চাষি প্রশিক্ষণের পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই চার ইউনিয়নের চারজন কৃষককে প্রশিক্ষণ শেষে মৌবক্স প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে বাছাই করে মৌ-চাষি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এসআর/এমএস/এএস