পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া চলছিল প্লাস্টিক কারখানা
বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভার হবির মোড় এলাকায় গত মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বিআইআরএস নামে একটি প্লাস্টিক কারাখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঝরে যায় ৫টি প্রাণ- কারখানাটি চলছিল পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া। পাঁচজনের মরদেহের পরিচয় শনাক্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রায় একবছর ধরে চলছিল কারখানাটি। কিন্তু কারখানাটির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই বলে জানা গেছে। ছাড়পত্র ছাড়া এতদিন কারখানাটি কিভাবে চলল সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক মোছা. সুফিয়া নাজিমের কাছে। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘সান্তাহারের বিআইআরএস প্লাস্টিক কারখানা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া পরিচালনা করছিল।’
পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া কারখানাটি এক বছর কিভাবে চলল এমন প্রশ্নের জবাবে সুফিয়া নাজিম বলেন, ‘আমরা একটি অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছিলাম, যেন সেখানে কারখানা করা যায়। কিন্তু সেখানে কোনো ধরনের পণ্য উৎপাদনের ছাড়পত্র আমরা দিইনি। তবুও কারখানাটি চলছিল, যা উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলা’র আবেদনের পর উচ্চ আদালত কারখানাটিকে ওয়ান টাইম প্লেট উৎপাদন বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু তারা ওয়ান টাইম প্লেট উৎপাদন বন্ধ করেনি। আইন অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
কারখানার মালিক মো. তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টো ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য টাকা জমা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা নেয়নি দপ্তরটি। অনেক কারাখানা তো চলছে নানাভাবে। মাত্র এক বছর থেকে কারাখানায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছি। অন্য সব কাগজপত্র আছে। ছাড়পত্রের কাজটিও খুব দ্রুত করে ফেলতাম। অন্য সব নিয়ম মেনে কারখানা পরিচালনা করে আসছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে ৫জন শ্রমিক মারা গেছেন। কারাখানার কাঁচামাল, যন্ত্রপাতিসহ অনেক কিছু পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।’
নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক একেএম মোর্শেদ ঢাকা প্রকাশকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট বিকাল ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা বলা সম্ভব না। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা বিদ্যুৎ-এর সর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। তবে এটি সঠিকভাবে তদন্তের পর জানা যাবে।’
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) শ্রাবণী রায় ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আমি কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এসআর/এএন