কুষ্টিয়ায় মুকুল হত্যা মামলার রায়
পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির ১৬ নেতা-কর্মীর কারাদণ্ড
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় জাহাঙ্গীর হোসেন মুকুল নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় ৩ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড, ৭ আসামিকে যাবজ্জীবন ও ৬ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷ একই সঙ্গে তাদের জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে৷ আসামিরা প্রত্যেকেই পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় নেতা-কর্মী।
সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরের দিকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম এ রায় দেন৷
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী৷
আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন হলেন দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে ওয়াসিম রেজা, একই গ্রামের মৃত নূরু বিশ্বাসের ছেলে সোহেল রানা ও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাটদাহ গ্রামের আলী জোয়ার্দারের ছেলে মানিক জোয়ার্দার৷ তাদের মধ্যে ওয়াসিম রেজা ও মানিক জোয়ার্দার পলাতক রয়েছেন৷ তাদের আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডের সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়েছে৷ অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়৷
একই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মশান গ্রামের মৃত খোরশেদ আলীর ছেলে ইদ্রিস, একই উপজেলার মশান কেত্তপুর এলাকার খন্দকার রবিউল ইসলামের ছেলে খন্দকার তৈমুল ইসলাম বিপুল, শালিমপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদ বিশ্বাসের ছেলে ফারুক চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চৌড়হাস মতি মিয়ার রেলগেট এলাকার খন্দকার মোছাদ্দেক হোসেন মন্টুর ছেলে উল্লাস খন্দকার, একই উপজেলার উদিবাড়ি এলাকার আমিরুলের ছেলে মনির, কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মজমপুর এলাকার মৃত আব্দুল খালেক চৌধুরীর ছেলে বিপুল চৌধুরী এবং দৌলতপুর উপজেলার পঁচা ভিটা গ্রামের মোজাহার মোল্লার ছেলে আব্দুল মান্নান মোল্লা৷ তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে৷ একই সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে৷
মামলায় ছয় আসামি মনির, জসিম, সোহেল, ওয়াসিম, উল্লাস ও মানিককে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়৷
মামলার অপর আসামি নফর আলী, আনোয়ার কাদের, জাকির হোসেন, আনোয়ার হোসেন এবং শরিফুল ইসলাম বিপুলকে খালাস করা হয়৷
জানা যায়, আসামিরা প্রত্যেকেই পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় নেতা-কর্মী এবং আন্তঃজেলা অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য৷
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীর হোসেন মুকুলকে অপহরণ করে আসামি সোহেল রানা ও ফারুক চেয়ারম্যান৷ অপহরণের পর ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসামিরা৷ ২৯ অক্টোবর আসামিদের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়৷ ২৫ নভেম্বর জাহাঙ্গীরকে হত্যা করে আসামিরা৷ পরে আবাদী জমিতে পুঁতে রাখা হয় জাহাঙ্গীরের মরদেহ৷ পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ৷ এ ঘটনায় নিহত মুকুলের বড় ভাই ইলিয়াস কবির বকুল বাদী হয়ে ২০০৯ সালের ২ ডিসেম্বর দৌলতপুর থানায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন৷ সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে ২১ মার্চ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত৷ এ মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে সোমবার আদালত এ রায় দেন৷
মামলার বাদী ইলিয়াস কবির বকুল বলেন, 'আমি আসামিদের শাস্তির খবর পেয়ে অত্যন্ত খুশি৷'
অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী বলেন, 'হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷ একই সঙ্গে তাদের জরিমানা প্রদান করা হয়েছে৷'
টিটি/