অপহরণ মামলা থেকে রেহাই পেতে বিয়ের নাটক
নেত্রকোনার মদনে এক স্কুলছাত্রী (১৪) কে বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মাসুম মিয়া (২২) নামের এক কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় অপহরণের মামলা করা হয়। পরে মামলা থেকে বাঁচতে সাজানো হয় ওই কিশোরীর সঙ্গে বিয়ের নাটক। অবশ্য মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার পরেই মেয়েটির বিয়ের নাটকের অবসান ঘটে। এ ঘটনাটি ঘটেছে মদন উপজেলার মাঘান ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকায়।
ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাঘান ইউনিয়নের ইকবাল মিয়ার ছেলে মাসুম। তিনি ময়মনসিংহ রয়েল মিডিয়া কলেজে অধ্যায়নরত। দীর্ঘদিন আগে প্রতিবেশী একটি হতদরিদ্র পরিবারের স্কুল পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তুলে মাসুম। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাতে ওই কিশোরীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায় সে। পরে বাড়িতে আটকে রেখে কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এলাকায় দফায় দফায় সালিশ বৈঠক হয়। এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবা ১২ সেপ্টেম্বর মাসুম মিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মদন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরপরই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় মাসুম। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর মদন থানায় একটি অপহরণ মামলা রজু করা হয়।
এদিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর নীলফামারী সদর উপজেলার দক্ষিণ রামনগর গ্রামের জহুরুল হকের মেয়ে জেসমিন আক্তারকে বিয়ে করে মাসুম মিয়া। পরে অপহরণ মামলা থেকে বাঁচতে নানা কৌশল নিতে শুরু করে মাসুমের পরিবার। সাজানো হয় ওই কিশোরীর বিয়ের নাটক। মাসুমের প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে ২৩ সেপ্টেম্বর ধর্ষিতা কিশোরীর সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরই ওই কিশোরীকে বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যান মাসুম। দুইপক্ষ মীমাংসা হওয়ার মর্মে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এর পর থেকেই ওই কিশোরীকে মাসুমের পরিবার নানাভাবে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বলেন, আমার মেয়েটাকে কয়েক দিন বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণ করে মাসুম। মামলা করার পর এলাকার মাতুব্বরা মিলে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে মাসুমের সঙ্গে। মাসুম আরেকটা বিয়েও করেছে। এখন আমার মেয়েকে অত্যাচার-নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ, কাজ করতে পারি না। আমার দুই ছেলে মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারে না বলে বাড়ি থেকে চলে গেছে। পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছে। আমি এখন কোথায় গিয়ে বিচার চাইব? এমন কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাসুম মিয়া জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে থাকি না। বিয়ের ব্যাপারে বেশী কিছু কথা বলতে চাই না। ওই কিশোরীর সঙ্গেও তার কোনও রকম যোগাযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে এলাকার মাতুব্বর সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার দেন-দরবার হয়েছে। দরবারে উপস্থিত সকলের সামনে মেয়েটি বলেছে তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করেছে মাসুম মিয়া। পরে থানায় মামলা হওয়ার পর মাসুমের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল। বর্তমানে মেয়েটিকে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে আমি শুনেছি।
এ ব্যাপারে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম জানান, মাঘান এলাকার কিশোরীর অপহরণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এখন বিষয়টি আদালত দেখবেন। ভুক্তভোগী পরিবার যদি পুনরায় নতুন কোনও লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ