টাঙ্গাইলে আমন ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রার ১৫ ভাগ পূরণ
টাঙ্গাইলে চলতি মৌসুমে সরকারি খাদ্যগুদামে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার এক চতুর্থাংশও পূরণ হয়নি। জেলার ১২টি উপজেলায় এবার ৫ হাজার ৮৭ মেট্রিক টন আমন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু ধান সংগ্রহ করা গেছে মাত্র ৭৫৬ দশমিক ১৬০ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার ৮৫ ভাগেরও কম পূরণ হয়েছে।
এবার সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ২৭ টাকা ও প্রতি কেজি চাল ৪০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।
গত বছরের ৭ নভেম্বর শুরু হয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই ধান-চাল সংগ্রহের অভিযান চালানো হয়। টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে এবার অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হয়।
মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার হাট-বাজারে আমন ধানের দাম অনেকটা ভালো ছিল। এছাড়া সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে বেশি শুকানো ও বাড়তি পরিশ্রম করতে হয় এবং বাজারে নগদ মূল্য পাওয়ার চেয়ে অ্যাপে একটু ঝামেলা মনে হয়। তাই কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রির চেয়ে বাইরে বিক্রি করতেই বেশি আগ্রহী ছিল।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে প্রকাশ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা থেকে দুই হাজার ৫৮মেট্রিক টন ধান কেনার কথা থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে ৫০ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন, সখীপুরে ৭৭২ মেট্রিক টনর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ দশমিক ৯৪ মেট্রিক টন, মির্জাপুরে ৩৪৮ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৬৭ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন, নাগরপুরে ১৫৮ মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৩১ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন, দেলদুয়ারে ২২৩ মেট্রিক টনের মধ্যে ৯১ দশমিক ৯২০ মেট্রিক টন, কালিহাতীতে ৩৪৩ মেট্রিক টনের বিপরীতে মাত্র শূন্য দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন, ঘাটাইলে ৮৬২ মেট্রিক টনের মধ্যে ৫ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন, মধুপুরে ৬৭১ মেট্রিক টনের মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন, ধনবাড়ীতে ৫০৩ মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮ দশমিক ৩৫ মেট্রিক টন, গোপালপুরে ৬০৫ মেট্রিক টনের মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ মেট্রিক টন এবং ভূঞাপুরে ২৬৪ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৪৭ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। একমাত্র বাসাইল উপজেলায় ৮০ মেট্রিক টনের পুরো ধান সংগ্রহ হওয়ায় শতভাগ অর্জিত হয়।
সূত্রমতে, আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও প্রত্যেক উপজেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হয়েছে। টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় উল্লেখিত সময়ে ১৬ হাজার ৬২২ দশমিক ১৪০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এবং তা সম্পূর্ণ সংগ্রহ করা হয়েছে।
কৃষকরা জানায়, সরকারি খাদ্যগুদামে বিক্রি করতে গেলে ধান বেশি শুকাতে হয়। এতে শ্রম, সময় ও পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু হাট-বাজারে বা বাড়ি থেকে বিক্রি করতে কোন কিছুই করার প্রয়োজন হয়না। পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়।
তারা জানায়, এবার মৌসুমের শুরু থেকে প্রকারভেদে আমন ধান বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাড়ির কাছে হাট-বাজার থাকায় সেখানেই তারা ধান বিক্রি করেছেন। আবার পাইকাররা বাড়িতে এসেও ওই দামে ধান কিনে নিয়ে গেছে। সেজন্য তারা সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হননা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন জানান, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ ও মজুত করা হয়। চলতি বছর বাইরে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রি না করে হাট-বাজারে বিক্রি করেছেন। এজন্য ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র পূরণ হয়নি। তবে চাল সংগ্রহে খাদ্য বিভাগ শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে।
কেএফ/