দেবী আসছেন গজে, যাবেন নৌকায়
এবার দেবী দুর্গা ধরায় আসছেন গজে। তিনি ফিরবেন নৌকায় চড়ে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী দুর্গার আসা-যাওয়ার বাহনের বিষয়ের উপর নির্ভর করে সারা বছর কেমন যাবে!
শাস্ত্র অনুসারে বলা হয়, দেবী দুর্গা গজ বা হাতি, ঘোটক বা ঘোড়ায় আসেন এবং নৌকা ও দোলায় চড়ে ফিরে যান। হস্তী বা হাতি সমৃদ্ধির প্রতীক। অর্থাৎ এবার দেবীর গজে আগমন মানে পৃথিবী শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, যা শুভ ফল নির্দেশ করে। আর নৌকা হলো সমৃদ্ধির প্রতীক। অর্থাৎ, দেবীর নৌকায় ফিরে গেলে পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত বেশি হবে, নদীনালা জলপূর্ণ হবে এবং শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, যা শুভ ফল নির্দেশ করে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা। সারাবছর এই সম্প্রদায়ের লোক মায়ের আগমণের অপক্ষোয় ব্যাকুল থাকেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার মহাপঞ্চমীর মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে মায়ের আরাধনা। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে মহালয়া। আগামী শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মহাপঞ্চমী, শনিবার (১ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী ও বুধবার (৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমী।
শারদ উৎসবকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো উৎসবমুখর সিলেট। প্রতিটি মণ্ডপে চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ। মোট কথা দম ফেলার ফুসরৎ নেই শিল্পীদের। ঢাক, ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মায়ের ভক্তরা। সিলেটে এবার ৬০৬টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। তার মধ্যে সর্বজনীন ৫৫৭টি, পারিবারিক ৪৯টি পূজার আয়োজন হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা সূত্রে জানা গেছে, সর্বজনীন আয়োজনে সিলেটের কতোয়ালী থানা এলাকায় সর্বজনীন ২৯টি, পারিবারিক ১১টি, জালালাবাদ থানা এলাকায় ১৬টি, পারিবারিক ৪টি। এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় ৩৮টি, পারিবারিক ১টি। শাহপরান থানা এলাকায় সর্বজনীন ৩৮টি, পারিবারিক ১টি। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ১৩টি ও পারিবারিক ১টি। মোগলাবাজার এলাকায় ১৫টি।
গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সর্বজনীন ৫৬টি ও পারিবারিক ৩টি। বালাগঞ্জ উপজেলায় সর্বজনীন ৩০টি ও পারিবারিক ২টি। কানাইঘাট উপজেলায় সর্বজনীন ৩৫টি। জৈন্তাপূর উপজেলায় সর্বজনীন ২০টি, পারিবারিক ২টি। বিশ্বনাথ উপজেলায় সর্বজনীন ২৪টি ও পারিবারিক ২টি। গোয়াইনঘাট উপজেলায় সর্বজনীন ৩৬টি। জকিগঞ্জ উপজেলায় সর্বজনীন পূজা ৯৯টি। বিয়ানীবাজার উপজেলায় সর্বজনীন পূজা ৩৯টি, পারিবারিক ১৩টি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সর্বজনীন ২৫টি, পারিবারিক ১টি। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সর্বজনীন ৩৭টি। ওসমানীনগর উপজেলায় সর্বজনীন পূজা ২৬টি ও পারিবারিক ৮টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়াদশমী নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষটিকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবশ্যাটির নাম মহালয়া। এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সিলেট নগরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগরা। তার পাশাপাশি নগরীর মণ্ডপগুলো বর্ণিল সাজে সাজানোর ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা যায়। প্রতি বছর এই পূজাতে নগরে নতুন নতুন সাজ-সজ্জা দেখা চোখে পড়ে।
সম্প্রীতির নগর সিলেটে সনাতন ধর্মালম্বীদের এই পূজায় সব ধর্মের মানুষকেই আনন্দ ভাগ করে নিতে দেখা যায়। নগরীর যতরপুর এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতি বছর মায়ের পূজার আয়োজন করেন সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর (সংরক্ষিত) দিবা রানী দে।
প্রতিমার ছবি তুলতে গিয়ে কথা হয় দিবা রানীর সঙ্গে। তিনি জানান, ভগ্ন হৃদয়ে গেলবার মায়ের চরণে ফুল দিয়েছি। সারা বছরের একটি মাত্র পূজায় ভীতির পরিবেশ নয়, সম্প্রীতির সুবাতাস দেখতে চান। একইসঙ্গে প্রত্যাশা করেন, প্রতিটি মণ্ডপে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি থাকে।
পূজার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন ঘোষ বলেন, সিলেট জেলায় শান্তিপূর্ণ পূজা আয়োজনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা, জেনারেটর রাখা ও পরিদর্শন বই রাখার জন্য আমরা সবাইকে অনুরাধ করেছি। আশা রাখছি এবার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শারদ উৎসব আনন্দ-উল্লাসে উদযাপন হবে।
এসএন