মসজিদ কমিটিতে থাকার যোগ্যতা
মসজিদের যথাযথ ব্যবহার, মসজিদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও উন্নতি ইত্যাদি বহুলাংশে নির্ভর করে মসজিদ কমিটির যোগ্যতা ও সদিচ্ছার উপর। কিন্তু সঠিক জ্ঞানের চর্চা না থাকায় এবং নৈতিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মসজিদের কমিটিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, মসজিদ কমিটির পদকে নেতৃত্ব মনে করা চরম বোকামি। মসজিদ কমিটির কোথাও জায়াগা হলে এটাকে নিছক খেদমত মনে করা দরকার। এ খেদমত আল্লাহর ঘরের খেদমত। মুসল্লিদের খেদমত। তাই দুনিয়ার কোনো চাওয়া-পাওয়া ব্যতিরেকে মুক্তমনে শুধু আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের ইচ্ছায় ইবাদত মনে করে খেদমতের মানসিকতা নিয়ে কমিটিতে অংশ নিতে হয়। সামাজিক পদমর্যাদা বৃদ্ধির অভিলাষে কমিটিতে যোগ দেওয়া হারাম।
মসজিদ পরিচালনাকারী মানুষের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কোরআনের এক আয়াত থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও পরকালের ওপর। তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১৮)
এ আয়াত থেকে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যদের পাঁচটি গুণের কথা জানা যায়। সেগুলো হলো—
১. আল্লাহর ওপর ঈমান আনা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদের যাবতীয় কাজ করা।
২. পরকালের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। অপার্থিব উদ্দেশ্যে মসজিদের জন্য কাজ করা।
৩. সালাত কায়েম করা। সালাত কায়েম হয় জামাতের সঙ্গে যথাযথভাবে সালাত আদায়ের মাধ্যমে।
৪. জাকাত দেওয়া। সাধ্যমতো দান-সদকা করার মানসিকতা থাকা।
৫. দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে নির্ভয়ে সত্য বলার অভ্যস্ত হওয়া। যারা স্বাধীনভাবে ও নিরপেক্ষভাবে সত্য বলে, তারাই মসজিদ কমিটিতে স্থান পাওয়ার যোগ্য।
৬. মসজিদের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক থাকা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে সেই সব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামাজ কায়েম করা থেকে এবং জাকাত দেওয়া থেকে বিরত রাখে না।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩৬-৩৭)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, এমন মানুষের তত্ত্বাবধানে মসজিদ পরিচালিত হওয়া জরুরি, যাদের সঙ্গে মসজিদের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন রচিত হয়েছে, যারা সুখে-দুঃখে সব সময় মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে। ইবাদত ও আমলের মাধ্যমে মসজিদকে আবাদ রাখে।
৭. মসজিদ ব্যবস্থাপনার পূর্ব-অভিজ্ঞতা এবং বৈষয়িক যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন অযোগ্যকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তখন কিয়ামতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকো।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪৯৬)
৮. পদলোভী না হওয়া। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমরা কোনো পদপ্রার্থী বা পদপ্রত্যাশীকে পদ দিই না।’ (বুখারি, হাদিস: ৭১৪৯)
৯. আমানতদার হওয়া। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার যথাযথ হকদারকে পৌঁছে দিতে...।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৮)
১০. আল্লাহভীরু ও মুত্তাকি হওয়া এবং মসজিদের শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়া। মক্কার কুরাইশরা মসজিদুল হারামের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে গর্ব বোধ করত এবং সেখানে মানুষের প্রবেশাধিকার ও ধর্মীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করত। আল্লাহ তাআলা তাদের এই প্রবণতার নিন্দা করে বলেন, ‘তাদের কী-ই বা বলার আছে যে আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না, যখন তারা মানুষদের মসজিদুল হারাম থেকে বাধা দেয়? অথচ তারা এর তত্ত্বাবধায়ক নয়। আল্লাহভীরুরাই এর তত্ত্বাবধায়ক। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ বিষয়টি জানে না।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৩৪)
১১. প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দ্বিনি জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ।’ (নাসায়ি, হাদিস: ২২৪)
১২. ফাসেক, পাপাচারী ও অপবিত্র না হওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেখানে (মসজিদে কোবায়) এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৮)
এই আয়াতে বাহ্যিক অপবিত্রতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অপবিত্রতার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ মসজিদসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রকাশ্য পাপ ও অপ্রকাশ্য অপবিত্রতামুক্ত হতে হবে।
আরএ/