জিলহজ মাসের আমল আল্লাহতায়ালার কাছে অধিক প্রিয়
আসছে হজ ও কোরবানির মাস জিলহজ। জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ এই ছয় দিন হজের মূল কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়।
খোদার রহমত ও নিয়ামত লাভের সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে জিলহজ মাসের প্রথম দশক। এ দিনগুলোকে রাসূল (সা.) বছরের শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘এমন কোনো দিন নেই, যার আমল জিলহজ থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! (সা.) আল্লাহর পথে সংগ্রাম-জিহাদও নয়? জবাবে রাসূল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জানমাল নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হলো এবং এর কোনো কিছু নিয়েই ফিরে না এলো, (অর্থাৎ যে শাহাদাতবরণ করেছেন) তার কথা ভিন্ন।’ (বুখারি, হাদিস: ৯৬৯)।
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল
১. বুখারি, নাসাঈ, মুসলিম ও মিশকাতের ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন কুরবানি করার আগ পর্যন্ত রোজা পালনসহ যে কোনো নেকির কাজ অধিক সাওয়াব ও ফজিলতপূর্ণ। সে হিসাব ১ থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত রোজা রাখা যায়। রাসুল (সা.) নিজেও এ দিনগুলোতে রোজা রাখতেন।’
২. জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফার দিনের রোজা রাখা বিশেষ মর্যাদার। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিনের রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার এক বছর আগের এবং এক বছর পরের সব ছোট গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম, মিশকাত)
৩. কোনো ওজর আপত্তি না দেখিয়ে আর্থিক ও শারীরিক সক্ষম ব্যক্তিদের হজ আদায় করা।
৪. যাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব, তাদের কুরবানি আদায় করা। আর যাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্যতম মাধ্যম আত্মত্যাগের নিদর্শন কুরবানি আদায় করা। কারণ সম্পদহীন ব্যক্তি কুরবানির আগ্রহ প্রদানে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে স্বচ্ছলতা দান করতে পারেন।
৫. জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানি সম্পাদনের আগে পর্যন্ত নখ, চুল ও মোচ ইত্যাদি না কাটা। হাদিস রয়েছে-
হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে ও তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন চুল নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, ইবনে হিব্বান)
৬. জিলহজ মাসের ৫ দিন তাকবিরে তাশরিক আদায় করা। তাকবিরে তাশরিক হলো— ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ আর তা ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে শুরু হয়ে ১৩ জিলহজ এশার নামাজের সময় শেষ হবে। মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়তে হয়। তাকবিরে তাশরিক পুরুষরা উচ্চ স্বরে আর মহিলারা নিচু স্বরে পড়বে। অর্থাৎ মহিলাদের তাকবিরের শব্দ যেন (গাইরে মাহরাম) অন্য লোকে না শোনে।
৭. শুধু ঈদের দিন (১০ জিলহজ) ব্যতিত জিলহজের প্রথম দশকে রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ঈদের দিন ব্যতিত) জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা পালন করতেন।
৮. বিশেষ করে ৯ জিলহজ রোজা আদায়ের ব্যাপারে প্রিয়নবী সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন যে, এ দিনের রোজা পালনকারীর বিগত এক বছর এবং আগাম (সামনের) এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
মুমিন মুসলমানের উচিত, জিলহজ মাসের বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার জন্য নির্ধারিত আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতি আজহার দিন (১০ জিলহজ) ঈদ পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আল্লাহ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।
আরএ/