আহলান সাহলান মাহে রমজান
শুভেচ্ছা স্বাগতম মাহে রমজান। কুরআন নাজিলের মাস রমজান। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।’ তাকওয়ার মাস রমজান। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫ ও ১৮৩)
রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের সুসংবাদ নিয়ে এলো মাহে রমজান। প্রিয় নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের নিয়াতে রমজানে রোজা পালন করে, তার পূর্বে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত সওয়াবের আশায় রমজানে রাত জেগে ইবাদাত করে, তার পূর্বে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে জেগে ইবাদাত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারী, প্রথম খণ্ড, হাদীস: ৩৭, ৩৬ ও ৩৪)
রজব ও শাবান দুইমাসব্যাপী আমরা দোয়া করে আসছি–‘হে আল্লাহ রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং রমজান আমাদের নসীব করুন!’ এই প্রার্থনা কবুল হলো। তাই সবাই বলছি- ‘আহলান সাহলান মাহে রমজান, সুস্বাগতম রমজান মাস’। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স.) বলেন: যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, খণ্ড: ৩, হাদীস: ১,৭৭৮)
‘সওম’ অর্থ বিরত থাকা; বহুবচন হলো ‘সিয়াম’। ফার্সি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলায় সওমকে ‘রোজা’ বলা হয়। পরিভাষায় সওম বা রোজা হলো ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইবাদাতের উদ্দেশ্যে পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তাআলা কুরআন হাকীমে বলেন, ‘আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণ রেখা হতে উষার শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)
প্রাপ্তবয়স্ক তথা সাবালক, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, রোজা পালনে সক্ষম সুস্থ সব নারী ও পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা বাধ্যতা মূলক ফরজ ইবাদত। ঋতুবতী নারী, সন্তান প্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তিগণ এই রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করবেন। এমন অক্ষম ব্যক্তি যিনি পুনরায় সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ লাভের সম্ভাবনা বিদ্যমান নেই, তারা রোজার জন্য ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমান দান করবেন। জাকাত গ্রণের উপযুক্তদেরই এই ফিদইয়া প্রদান করা যাবে।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারেরাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পরে এই দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে, তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারী, খণ্ড: ৩, হাদীস: ১,৭৭৫)। রমজান মাসে প্রতিটি নেক আমলের ফজিলত সত্তরগুণ বৃদ্ধি করা হয়। একেকটি নফল ইবাদাতের সওয়াব ফরজ ইবাদাতের সমান দান করা হয়।
রমজান মাসে একটি ফরজ, পূর্ণ একমাস রোজা পালন করা। রমজানের সাথে সম্পৃক্ত দুটি ওয়াজিব–সদকাতুল ফিতর প্রদান ও ঈদের নামাজ আদায় করা। রমজানের বিশেষ সুন্নাতসমূহ হলো–রজব মাস ও শাবান মাস বরকতের জন্য এবং রমজান প্রাপ্তির জন্য দোয়া করতে থাকা; রজব ও শাবান মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা, রজব ও শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখা ও নফল নামাজ আদায় করা, শাবান মাসের চাঁদের তারিখের হিসাব রাখা; রমজানের চাঁদ দেখা; সাহরী খাওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, বিশ রাকাত তারাবীহ নামাজ আদায় করা, কুরআন কারীম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং ইতিকাফ করা; রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোয় শবে কদর সন্ধান করা, ঈদের জন্য শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা।
তারাবীহ নামাজ রমজানের বিশেষ আমল। এতে কুরআন তিলাওয়াত ও রাত্রি জাগরণের আমলও হয়। পুরুষগণ তারাবীহ নামাজ মসজিদে জামাআতে আদায় করা সুন্নাত। ওজরের কারণে মসজিদে যাওয়া সম্ভবপর না হলে এবং জামাআত করা না গেলে; তখন একা পড়লেও পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে। অনুরূপ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজও বিশেষ অবস্থায় একাকী আদায় করা যাবে। এতেও পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া হবে।
তারাবীহ নামাজে পূর্ণ কুরআন শরীফ একবার পাঠ করা সুন্নাত। একে খতম তারাবীহ বলা হয়। যারা সব সময় খতম তারাবীহ পড়ে থাকেন বা পড়ার ইচ্ছা রাখেন, তারা বিশেষ কোনো কারণে তা করতে না পারলেও এর পুর্ণ সওয়াব লাভ করবেন। হাদীস শরীফে রয়েছে, ‘কাজের ফলাফল নিয়াতের উপর নির্ভরশীল।’ (বুখারী, হাদীস: ১)।
রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করুন। রমজানে ইবাদাতের পরিবেশ বজায় রাখুন। রমজানের ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাতসমূহ পালন করুন। নিজে নেক আমল করুন অন্যদেরও নেক আমলে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করুন। দুনিয়ার শান্তি ওপরকালের মুক্তি নিশ্চিত করুন। রমজানের রোজা পালন ও ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং কোপ ও রোষ থেকে নিষ্কৃতি ও বালা মুসিবত থেকে মুক্তির চেষ্টা করুণ। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রোজা অমারই জন্য, আমিই এর বিনিময় প্রতিদান দেবো।’ (বুখারী, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২২৬)
এসএ/