মুসলমানদের জন্য রমজানের রোজা কেন ফরজ?
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস রমজান। বছর ঘুরে আবারও এসেছে সিয়াম সাধনার এই মাস। অনেকেই জানেন না মাহে রমজানের এই রোজা কখন, কেন, কিভাবে ফরজ করা হয়েছে। পাঠকদের জন্য এ বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
রোজা ফরজ হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, ইসলামের অনেক ফরজ ও ওয়াজিব কাজ এসেছে কোনো না কোনো নবী-রাসূল বা তাঁদের পরিবারের আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তাঁদের স্মরণার্থে উম্মতদের জন্য অপরিহার্য করা হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়–হজের সময় সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে হাজিদের দৌড়ানোর যে বিধান তা হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সহধর্মীনি হজরত হাজেরার (রা.) স্মৃতির স্মরণার্থে। তিনি ছেলে হজরত ইসমাঈলের (আ.) জন্য পানি খুঁজতে গিয়ে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সাতবার দৌঁড়েছিলেন। হজরত হাজেরার (রা.) এ কাজকে স্থায়ীভাবে স্মরণীয় করে রাখতে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে হাজিদের সাতবার প্রদক্ষিণ করা ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে।
হজরত হাজেরার (রা.) মতোই রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর একটি স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে মাহে রমজানের রোজা মুসলমানদের উপর ফরজ করা হয়েছে।
রমজান মাসে বেশ কিছুদিন হজরত মোহাম্মদ (সা.) হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন ছিলেন। দিনের বেলায় পানাহার করতেন না, আর রাতে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকতেন। তাঁর এই ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর কাছে এত পছন্দনীয় হয় যে, ওই ইবাদতে কাটানো দিনগুলো স্মরণীয় করে রাখতে রাসুলের উম্মতদের ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করে দেওয়া হয়।
রোজা নবী মুহাম্মদ (সা.) এর পছন্দের ইবাদত ছিল। যখন রমজানের রোজা ফরজ হয়নি, তখনও তিনি আশুরার দিন রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের (রা.) রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। পরে যখন রমজানের রোজা ফরজ করে দেওয়া হয় তখন তিনি ও তাঁর সাহাবারা আশুরার রোজা রাখা ছেড়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে সাহাবি হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিন রোজা পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও দিয়েছেন। পরে যখন রমজানের সিয়াম ফরজ হলো, তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। (বুখারী-তৃতীয় খণ্ড)
আরেক হাদিসে বর্ণনা রয়েছে, হজরত মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহেলি যুগে কুরাইশগণ আশুরার দিন রোজা রাখতো, রাসুলুল্লাহও (সা.) এই রোজা রাখার নির্দেশ দেন। অবশেষে রমজানের রোজা ফরজ করা হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যার ইচ্ছা আশুরার রোজা রাখবে এবং যার ইচ্ছা সে রোজা (আশুরার) রাখবে না। (বুখারী- ৩য় খণ্ড)
মহানবী (সা.) এর আগে তার পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণও রোজা রাখতেন। তবে তাদের রোজার ভিন্নতা ছিল। যেমন হজরত আদম (আ.) প্রত্যেক মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন। (কানযুল ওম্মাল ৮ম খণ্ড ২৫৮ পৃষ্ঠা, হাদিস- ২৪১৮৮)
একইভাবে হজরত নূহ (আ.) দুই ঈদ ছাড়া সবসময় রোজা রাখতেন। (ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৩৩পৃষ্ঠা, হাদিস-১৭১৪)
হজরত দাউদ (আ.) একদিন পরপর রোজা রাখতেন। (মুসলিম, ৫৮৪ পৃষ্ঠা, হাদিস ১১৮৯)
হজরত সোলায়মান (আ.) মাসের শুরুর তিন দিন, মাসের মধ্যভাগে তিন দিন, মাসের শেষ ভাগে তিন দিন (মাসে ৯দিন) রোজা রাখতেন। (কানযুল ওম্মাল, ৮ম খণ্ড, ৩০৪ পৃষ্ঠা, হাদিস ২৪৬২৪)
হজরত ঈসা (আ.) সবসময় রোজা রাখতেন, কখনও রোজা ছাড়তেন না। (মুসলিম, ৫৮৪ পৃষ্ঠা, হাদিস ১১৮৯)
ইসলামে রোজার গুরুত্ব কতখানি তা বলে শেষ করা যাবে না। আল্লাহকে পাওয়ার বড় মাধ্যম এই রমজানের রোজা। তাওহিদ ও রিসালাতকে বিশ্বাস করা এবং দ্বীনের সব জরুরি বিষয়ের ওপর ঈমান আনার পর যেভাবে প্রত্যেক মুসলমানের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ, ঠিক তেমনি রমজানের রোজাও প্রত্যেক সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক (নর-নারী) মুসলমানের উপর ফরজ।
এসএ/