ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় বাসায় ডেকে নিয়ে পেটালেন গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী!
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
গুরতর অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি জাকির হোসেন-এর বিরুদ্ধে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের থেকে ৯৪ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
দীর্ঘদিন যাবত চাকরি দেওয়া বা টাকা ফেরত দেওয়া-কোনোটিই তিনি করেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঘুষ দেওয়া চাকরিপ্রার্থীরা। আর এরই জেরে তাদের এবার বাসায় ডেকে নিজের হাতে রড দিয়ে পেটালেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ৩৫ নম্বর সরকারি বাসায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন মার খেয়ে পালিয়ে আসা এক ভুক্তভোগী। জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য সুপারিশ করতে যান ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ’-এর আবু সুফিয়ান বিশ্বাসসহ কয়েকজন। আবু সুফিয়ান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও খুলনা জেলার সভাপতি। ২০২২ সালের ৮ জুন মাসে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বাসায় ওই মিটিং হয়।
আবু সুফিয়ান বলেন, ওই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ৪৮ জনকে নিয়োগের জন্য ৬ কোটি টাকায় সমঝোতা হয়। মন্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে লিটন ও ড্রাইভার মোমিনকে টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন। তখন অগ্রিম হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের উপস্থিতিতে লিটন ও মোমিনের কাছে ৪৮ জন চাকরি প্রার্থীর জন্য ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন আবু সুফিয়ান ও নাছির হাওলাদার নামের এক চাকরি প্রার্থী। তবে ওই ৪৮ জনের কেউই চাকরি পাননি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অগ্রিম টাকা দেওয়ার পরও চাকরি না হওয়ায় ১১ জুন প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেখা করেন আবু সুফিয়ানসহ অন্যরা। এ সময় মন্ত্রী তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রায় এক বছর পার হয়ে গেলেও তারা ঘুষের টাকা ফেরত পাননি। ফলে গত ১৪ মে ৪৮ জনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন আবু সুফিয়ান। এতে ক্ষুব্ধ হন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
সম্প্রতি ঘোষিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি জাকির হোসেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ওপর। বৃহস্পতিবার তাদের টাকা ফেরত নেওয়ার কথা বলে মন্ত্রীর বাসায় ডাকেন ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোল। কল্লোলের কথা মতো সকাল ১১টায় মন্ত্রীর মিন্টো রোডেরে ১১ নম্বর বাসায় যান আবু সুফিয়ান, নাছির হাওলাদার ও জাহিদ হাসান নামের তিনজন।
ওই তিনজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের রুমে ঢোকার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওপর থেকে ওই রুমে চলে আসেন মন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রী তার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বাসার নিরাপত্তায় থাকা ৭ থেকে ৮ জন ওই রুমে প্রবেশ করে। এ সময় রুমের দরজা আটকে দিয়ে তিনজনকে মারধর করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মন্ত্রী নিজেও রড দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ছোটাছুটি করে রুমের দরজা খুলে ফেলেন ভুক্তভোগীরা।
এক পর্যায়ে তিনজনের মধ্যে থেকে নাছির হাওলাদার ও জাহিদ হাসান প্রধান ফটক দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। আবু সুফিয়ান পার্শ্ববর্তীর দেওয়াল টপকে ডিবি কার্যালয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েন। পরে ডিবি কার্যালয়ের নিরাপত্তায় থাকা সদস্যরা তাকে আটক করে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন জাহিদ হাসান। এ সংবাদ লেখার কিছুক্ষণ আগে বেলা ২টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে যান মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোল।
মন্ত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর জাহিদ হাসান ও নাসির হাওলাদারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে জানতে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ও তার ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন কল দেওয়া হলেও দুজনের কেউ তা রিসিভ করেননি।
এদিকে ভুক্তভোগী আবু সুফিয়ান এখন কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছেন তা ডিবি কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।