দানবীয় নীতি বাস্তবায়ন করছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী: ফখরুল
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে রবিবার (২১ মে) রাতে গোয়েন্দা পুলিশের তুলে নিয়ে যাওয়া ও এখন পর্যন্ত তার কোনো হদিস না দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীকে গুম, হত্যা ও অঙ্গহানি করার এক দানবীয় নীতি বাস্তবায়ন করছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী।
সোমবার (২২ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদলীয় দুঃশাসনের এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় গণতন্ত্র এখন মৃতপ্রায়। প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা শূন্যের কাছাকাছি, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়াসহ জনজীবনে যে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজমান সেটি আড়াল করতেই সরকার আরও বেশি জুলুমের পথ বেছে নিয়েছে। গণতন্ত্রকামী মানুষ প্রতিনিয়ত নির্যাতন-নিপীড়ণের শিকার হচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার বিএনপির জাতীয় নেতাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করতে এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ উঠলেই তারা বেসামাল হয়ে পড়ে। ফলে দুঃশাসন আরও বেশি ভয়াবহ রুপ লাভ করেছে। গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার, শান্তিপূর্ণ যেকোনো কর্মসূচির উপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে বিএনপির নেতা-কর্মীকে হত্যা ও অঙ্গহানি করার এক দানবীয় নীতি বাস্তবায়ন করছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী।
তিনি বলেন, দলীয় চেতনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাজিয়ে ‘প্রাইভেট বাহিনী’র’ ন্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এরা আইনশৃঙ্খলার কাজে লিপ্ত না থেকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সশস্ত্র দলীয় ক্যাডার এবং সাজানো পুলিশ প্রশাসন একযোগে নব্য নাৎসী বাহিনীর ন্যায় আচরণ করছে। চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্তাক্ত পন্থায় দমন করতে দ্বিধা করছে না তারা। দুঃশাসনের নিঃশব্দ পরিবেশ সৃষ্টি করতেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে গতরাতে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে রফিকুল আলম মজনুকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও মজনুকে তুলে নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণরুপে উচ্চ আদালতের প্রতি অসম্মান জানানো। ক্ষমতাসীনরা আইন কানুনের কোনো তোয়াক্কা করে না। তারা রাষ্ট্রক্ষমতার জোরে একের পর এক বেআইনি কাজ করে সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। এই অগণতান্ত্রিক সরকার গণতন্ত্রের বিধি-বিধান নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা করে না বলেই বিএনপিসহ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি, বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ এই সরকারের চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। বিরোধী সভা-সমাবেশসহ মত প্রকাশে নগ্নভাবে বাধা প্রদান করেও তারা আশস্ত হতে পারছে না। তাই মজনু’র মতো সংগ্রামী নেতাদের গ্রেপ্তার করে শঙ্কামুক্ত হতে চায়।
আমি সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই-জনগণের প্রতি দমননীতি প্রয়োগ করে সরকারের ক্ষমতা আর নিরাপদ থাকবে না। রাষ্ট্রীয় অনাচার বৃদ্ধি করে আর সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখানো যাবে না। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই-গণবিরোধী জুলুমের পথ থেকে অবিলম্বে সরে আসুন, গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ করুন, জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিন। পৃথিবীতে কখনোই স্বৈরাচার বেশিদিন টিকতে পারেনি, আটককৃত নেতাদের মুক্তি দিন এবং এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
বিবৃতিতে অবিলম্বে রফিকুল আলম মজনুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এমএইচ/আরএ/