জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ছড়াছড়ি
জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বসাতে ভোট আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিল ও যাচাই বাছাই করা হয়ে গেছে। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ছিল প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এরই মধ্যে ২৭ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করে। এ ছাড়া, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬২০ জন এবং সাধারণ পদে ১ হাজার ৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করে। জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে। তারমধ্যে সংরক্ষিত ১৯ জন নির্বাচিত আর সাধারণ সদস্য পদে ৬৮ জন নির্বাচিত।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলো জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের খবর খুব বেশি একটা নেই। যেহেতু জেলা পরিষদ নির্বাচনে মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বরদের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে থাকেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। যেখানে দেশের অধিকাংশ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরাই চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই অন্য দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে এলে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না বলে নির্বাচনে আগ্রহ কমা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে যেহেতু এই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয় না। তাই কোন দল থেকে কত জন অংশগ্রহণ করছে সেটার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া মুশকিল। অন্য দল দলীয় ফোরামে আলোচনা করে প্রার্থীদের প্রতি সমর্থন না জানালেও আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন দিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীর বাইরেও আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে এসকল প্রার্থী ভোটে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ থেকে কঠোর কোনো নির্দেশনা নেই।
জেলা পরিষদের গঠন
একজন চেয়ারম্যান, পনের জন সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের ৫ জন মহিলা সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত। একটি নবগঠিত জেলা পরিষদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর। জেলা পরিষদের নির্বাহী একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি সরকারের উপ সচিব পদমর্যাদার হোন।
জেলা পরিষদের কার্যবলী
জেলা পরিষদ একটি সংবিধিবদ্ধ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক সময় সময় জারীকৃত পরিপত্র দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। জেলা পরিষদ এর স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন ও অধিকারে রাখার ক্ষমতা রয়েছে এবং পরিষদ এর নিজস্ব তহবিল রয়েছে। উন্নয়ন মূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়াও জেলা পরিষদ আইন,২০০০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত বাধ্যতামূলক কাজ সম্পাদন করে থাকে।
জেলা পর্যায়ে সকল উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করে সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ে ও স্থানীয় সরকার বিভাগে এতদবিষয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ।
উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের উন্নয়ন কার্যক্রমের পর্যালোচনা করণ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রতিবেদন প্রেরণ করণ।
জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন খেয়াঘাট ও পুকুর ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ।
রাসত্মার পার্শ্বে ও জনসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বৃক্ষরোপন ও উহার সংরক্ষণ।
জনস্বার্থে যাত্রী ছাউনী নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা।
ডাকবাংলোর ব্যবস্থা ও রক্ষণা-বেক্ষণ।
নিজস্ব জায়গায় মার্কেটের মতো আয় বর্ধক মুলক স্থাপনা নির্মাণ করত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্র/ছাত্রীদের সাহাযার্থে বৃত্তিপ্রদান কার্যক্রম।
মহানবী (স.) এর জন্মদিবস, জাতীয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস, শহীদ দিবস ও অন্যান্য জাতীয় অনুষ্ঠান উদযাপন।
দুঃস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও অনুদান প্রদান।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে কারা ভোটার
আইন অনুযায়ী জেলার অন্তর্গত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জেলা পরিষদের ভোটার। জেলার প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণসংখ্যা) নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। জেলা পরিষদ গঠনের পর প্রথম সভার মেয়াদ থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় জেলা পরিষদ আইন ২০২২ এর ক্ষমতা বলে পরিষদকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে সরকার।
এসএম/এমএমএ/