সরকার পতনে ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি: আমির খসরু
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলন প্রতিরোধ করবে বাংলাদেশে এমন কোনো শক্তি নাই। আজকে বিএনপি যে আন্দোলন করছে সেটা শুধুমাত্র বিএনপির একার আন্দোলন নয়। চলমান আন্দোলন ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশের আত্মাকে ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন।’
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে সেই ফয়সালা হবে রাজপথে। তার জন্যই আন্দোলন। মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বলেই রাস্তায় নেমে এসেছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না ঘটিয়ে কেউ রাস্তা ছাড়বে না। আমরা সরকার পতনে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি।’
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকামহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই জনসভার উপস্থিতি প্রমাণ করে হামলা-মামলা ও আক্রমণ চালিয় জনগণের আন্দোলন দাবিয়ে রাখা যায় না। এখানে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা সেই সাহসী ভূমিকা দেখিয়েছেন। এই সাহসী ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে। আহত অবস্থায় জনসভায় তাবিথ আউয়াল যুদ্ধ ক্ষেত্রে ফেরত এসেছেন, ইচ্ছে করলে তিনি না এসেও থাকতে পারতেন। তিনি এসেছেন; কারণ এই ফ্যাস্টিস সরকারের পতন না ঘটা পর্যন্ত সবাইকে রাস্তায় থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে বলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করতে পারছে না দাবি করে আমির খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগে রাজনীতিবিদদের হাতে কোনো নেতৃত্ব নেই। তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে সরকারি কর্মকর্তাদের (ডিসি) হাতে। যার প্রমাণ সম্প্রতি চট্টগ্রামে ডিসি মমিনুর রহমান। উনি মোনাজাত করছেন আর সংসদ সদস্য মোনাজাতে শরিক হয়েছেন। একইভাবে গাইবান্ধায় উপ-নির্বাচনের জন্য দেখলাম হাইকোর্টের একজন জজ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে গেছেন। এর মানে হলো জন বিছিন্ন আওয়ামী লীগে এখন কোনো রাজনীতি নাই, নেতৃত্ব নাই, নেই তাদের সমর্থক। তাদের সমর্থক হচ্ছে দখলদার, টেন্ডারবাজ, হামলাকারী। সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে রাজনীতি তুলে দিয়েছে।’
জনগণ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মন্তব্য করে আমির খসরু বলেন, ‘খুব শিগগিরই একটি রুপরেখা প্রকাশ করা হবে। সরকারবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিক্রমেই এই রূপরেখা তুলে ধরা হবে। আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাই থাকবে রূপরেখায়। কারণ, একটি ফ্যাস্টিস সরকারকে সরিয়ে অন্য কোনো ফ্যাস্টিস সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনায় আসতে দেওয়া যাবে না। দেশের সামগ্রিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে। সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকি সরকারকে বিদায় হতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে গেছেন। উনি তিন চার দিন আগেই চলে গেছেন। ওখানে নিশ্চয়ই কোনো কাজকর্ম আছে। দেশে কিছু নাই বিদেশেও কিছু নাই। খালি হাতে যাবেন খালি হাতে আসতে হবে। লন্ডনে আমাদের অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছে; তিনি বলেছেন একমাত্র আওয়ামী লীগের সময়ই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। অথচ এমন কথা দেশে বিদেশে কেউ বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশে গুম খুন হচ্ছে বলেও প্রশ্ন করা হয়। যেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলছে বাংলাদেশে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্য? শেখ হাসিনাকে কেন এই ধরনের প্রশ্ন করা হয় বুঝার বাকি আছে কী? আমাদের কথা হচ্ছে উনার লজ্জা থাকা উচিত। কারণ, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ যেমন ভারত, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে তো কেউ এমন প্রশ্ন করেন না, করা হয় না।’
পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অনির্বাচিত সরকারের অন্যায় নির্দেশ মেনে বাধা দেবেন না। আপনাদের একটা ক্ষুদ্র অংশ আছে যা আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে গেছেন, নেতা হতে চাচ্ছেন… আপনারা ওই পথে যাবেন না। দেশ ও আপানাদের কারও জন্যই ভালো হবে না। মনে রাখবেন সবাই নয়, আপনাদের বৃহত্তর একটি অংশ কিন্তু জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেবে না।’
এমএইচ/এমএমএ/