‘সংগ্রাম-লড়াই করে পূর্বের বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে’
আবারও সংগ্রাম-লড়াই করেই পূর্বের সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ চায় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে। কোনো একটি দলীয় সরকারের অধীনে কি সেই নির্বাচন হবে? তাই আজকের যে লড়াই সেটা কারও একার লড়াই নয়। সেই লড়াইয়ে বিএনপি তার সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে।’
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে ভাগ করে ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মাঝে মধ্যে বলি যে, এটা একটা নষ্ট সময়। সব কিছুকে এরা (সরকার) নষ্ট করে ফেলছে। মিথ্যাচার, ভ্রষ্টাচার, দুর্নীতি এমন একটা জায়গা নেই যে, দেশটাকে বের করে আনার কোনো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি বিচারালয় যান বিচার পাবেন না। আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কাছে যাবেন নিরাপত্তা জন্য সেখানে নিরাপত্তা পাবেন না-আগে বলবে-তুমি বিএনপি করো না আওয়ামী লীগ করো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি করলে কোনো কিছু হবে না, উপরন্তু আপনার বিরুদ্ধে মামলা করে দেবে। এই ঢাকা দক্ষিণে ছাত্র দলের তিন জন ছেলে রাতে বাসায় যাচ্ছিল ওই সময়ে তাদেরকে আক্রমন করে আহত করা হয়েছে। মামলা দিতে গেছে ওদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার গোটা জাতি গত ১২/১৫ বছরে বিভক্ত করে ফেলেছে। এমন একটা জায়গা পাবেন না সেখানে আপনি দেখবেন যে, বিভক্তি নেই। সবখানে এই আওয়ামী লীগ আর বাকি সব বিরোধী এই একটা ভাগ তিনি করে ফেলেছেন।’
তিনি বলেন, মসজিদের কমিটিতে ভাগ, স্কুলের কমিটিতে ভাগ, মাদ্রাসার কমিটিও ভাগ, গানের স্কুলেও ভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে ভাগ, কলেজেও ভাগ-সবখানে ভাগ। এই যে বিভক্তি কোনো জাতিকে কখনো সামনের দিকে নিয়ে যাবে না। জাতিকে সামনের দিয়ে নিয়ে যায় ঐক্যের মধ্য দিয়ে যেটা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান করেছিলেন। ’৭৫ সালে এসে তিনি সেই বিভক্তি দূর করে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই গাজী মাজহারুল আনোয়ার জিয়াউর রহমান সাহেবের ভক্ত ছিলেন। অন্যদিকে জিয়াউর রহমান সাহেবও তার ভক্ত ছিলেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনটাই কেমন যেন নষ্ট হয়ে গেছে একদম, কুলষিত হয়ে গেছে। কোথায় ভালো জিনিস আছে বলেন। আজকে এটা তো সত্য কথা যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোটা-এটা ভেঙে পড়েছে, ভঙ্গুর। কারণ, একটা নির্বাচনের মাধ্যমে যে একটা পার্লামেন্ট গঠন হবে, সরকার গঠন হবে সেই নির্বাচনে জনগনই অংশ নিতে পারে না। তাহলে এটা কিসের নির্বাচন?’
ওই জায়গাটা তারা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। তাহলে এই যে একটা অবস্থা, এই যে একটা পরিবেশ, এই যে একটা সমাজ, যে একটা রাষ্ট্র তারা তৈরি করছে এখান থেকে মুক্তি হবে কী করে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এখান থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে। এটা কি একা বিএনপির দায়িত্ব? সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য আমরা এখানে একটা সুন্দর আবাসভুমি তৈরি করতে পারছি না।
ফখরুল বলেন, ‘যেখানে শান্তির সঙ্গে তারা একটা মুক্ত রাষ্ট্রে, মুক্ত সমাজে বাস করবে সে রকম কোনো পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারছি না। এর জন্য দায়ী সম্পূর্ণ আজকের শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণে ‘ড. খন্দকার মোশাররফ ফাউন্ডেশনে’র উদ্যোগে এই স্মরণ সভা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর গাজী মাজহারুল আনোয়ার মারা যান।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে বাতিঘর হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি আমাদের সামনে একটা নক্ষত্রের মতো, ছিলেন বাতিঘর। আমরা এই ধরনের মানুষ আর পাব না।
তিনি বলেন, ‘আমরা অনুপ্রাণিত হই তার গানের মধ্য দিয়ে, আমরা অনুপ্রাণিত হই তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে, আমরা অনুপ্রাণিত হই তার কাজের মধ্য দিয়ে।’
প্রয়াত গাজী মাজহারুল আানোয়ারের বর্ণাঢ্য জীবন-কর্ম তুলে ধরেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সহধর্মিনী জোহরা গাজী ও ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপল বক্তব্য দেন।
এমএইচ/এমএমএ/