ঢাকায় বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবার ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেভাবেই হোক সরকারের পতনের মাধ্যমে দেশে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নানামুখি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যে জেলা উপজেলা পর্যায়ে সরকার বিরোধী সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন গুলো।
বিএনপি নেতারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর এবার দলটি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার কর্মসূচি নিচ্ছে। এরপর বিএনপির টার্গেট ঢাকায় বড় সমাবেশ করা। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দেড় বছর। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ এখন গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত। গত কিছুদিন ধরে নিয়মিত নানান কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। সরকার হটানোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা বিএনপি নেতাদের বক্তব্যেও ফুঠে উঠেছে অসহিষ্ণুতা। পাল্টা বক্তব্যও আসছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছ থেকে।
বিএনপি নেতারা বলছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। সরকার এবং বিরোধী দল তো এখনো দুই মেরুতে অবস্থান করছে। এমন অবস্থায় সংঘর্ষ হওয়াটা আশ্চর্য কিছু নয়। দেশ জুড়েই বিরোধীদের দমন-পীড়ন-অরাজকতা চলছে। রাজনৈতিকভাবে সমঝোতার পথ ক্ষীণ বিবেচনায় রেখেই বিএনপিও ধারাবাহিকভাবে রাজপথে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে ঐক্যমতে পৌছেছে। তৃণমূলের থানা-উপজেলা-পৌর-ইউনিয়ন পর্যায়ে চলমান কর্মসূচি শেষ হচ্ছে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর)। কর্মসূচিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। যদিও কয়েকটি জেলায় নতুন করে মামলার কারণে শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তারা। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন দলটির হাইকমান্ড। বৈঠকে নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে কর্মসূচির ধারাবাহিকতা ধরে রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেতারা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘোষণা করা আছে।কর্মসূচি আরো চলমান রাখতে এবার বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশ শেষে ঢাকায় একটি বৃহত্তর সমাবেশ করার বিষয়েও পরিকল্পনা রয়েছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এসব সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রমতে, ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশের মধ্যে দিয়ে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে যেতে চায় বিএনপি। সমাবেশের সেই দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও ঢাকায় সমাবেশের পূর্বেই অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর এই কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। গত সোমবার দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে এসব কর্মসূচির বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়। পরে রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে তৃণমূলকে আরও চাঙ্গা রাখতে শীর্ষ নেতাদের এলাকায় অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে চায় বিএনপি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে দলের হাইকমান্ড। কৌশলও পরিবর্তন করেছে দলটি। নানা ইস্যুতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়মিত লন্ডন থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। ছাত্রদল-যুবদলের কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করা হবে। স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যোগাযোগ ও তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।’
এদিকে বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচির কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির কর্মসূচি দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশের বিরাজমান স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিনষ্টের যে কোনো অপপ্রয়াস আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। কারণ, দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বা ইস্যু নেই যে, বিএনপিকে আন্দোলন করতে হবে। যেকোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়। কিন্তু কর্মসূচির নামে সহিংসতা সৃষ্টি করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শক্ত হাতে তা দমন করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো আন্দোলনে নামার যে পরিকল্পনা করছে, তা যাতে দানা বাঁধতে না পারে, সে লক্ষ্যেই সারাদেশে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। সরকার বোঝাতে চাইছে যে, এই দাবিতে মাঠে নেমে কাউকে সংঘবদ্ধ হতে দেওয়া হবে না। অথচ এই দেশে নজির আছে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনই ব্যর্থ হয়নি। সফলতার জন্য সময়টা কম বেশি হতে পারে।’
সরকার হটাতে নেতাকর্মীদের ‘রাজপথ দখলে’র প্রস্তুতি নেয়ার ডাক দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, এই লড়াই-সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ আমাদের প্রাণের লড়াই, আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই, এই লড়াই বাংলাদেশকে রক্ষা করবার লড়াই। এটা বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, আমাদের নয়, এই লড়াই বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাবার লড়াই। এই লড়াইয়ে অবশ্যই আমাদের শরিক হতে হবে, আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, রাজপথ আমাদেরকে দখল করতে হবে। রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অবশ্যই এই ফ্যাসিস্ট দানবীয় হাসিনা সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই আমরা একটা জনগণের সরকার, জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের একটা সমাজ তৈরি করব।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত হওয়াতে সরকার এতটাই ভয় পেয়েছে যে সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনিভাবে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
এনএইচবি/এমএমএ/