বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে সরকারের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বানভাসি মানুষের মধ্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন সরকারের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়। আমরা অবিলম্বে দুর্গত মানুষের মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, গৃহ নির্মাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থার জোর দাবি জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলে মির্জা ফখরুল। দলের স্থায়ী কমিটির অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘ইডিএফ’ নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানের ফলে প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৪.০২ বিলিয়ন ডলার। ওই ধরনের প্রায় সবটাই (ফোর্সডলোন অধিকাংশই রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংকের) পর্যবসিত হয়েছে। আই এম এফ এই ধরনের ঋণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ন্তভুক্ত না করতে বলেছে। এই সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার অবয়বে আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
'সরকার অর্থনীতির সব নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সব বিধি-বিধান ভঙ্গ করে শুধুমাত্রা নিজেদের ঘনিষ্ট এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ইডিএফ’ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরি করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করছে। সুদূরপ্রসারী প্রভাব সামাজিক অর্থনীতি ও সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সাভারে স্কুল শিক্ষক হত্যার ঘটনা, নড়াইলে অধ্যক্ষকে অপমানসহ সারা দেশে সামাজিক নৈরাজ্যের চিত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে বিএনপি।
দলটির স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, এই অনির্বাচিত সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায়, সমাজের সব পর্যায়ে নীতি নৈতিকতা চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট এবং সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টি করলেই সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দলের সভায় দেশজুড়ে ‘জনশুমারি’ ও গৃহগণনার কাজ সঠিকভাবে হয়নি বলে পরিকল্পনামন্ত্রী স্বীকারক্তিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
'জনশুমারি প্রকৃত পক্ষে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহ এর কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হওয়ায় প্রকৃত তথ্য কখনই পাওয়া সম্ভব হয়নি। জনগণকে এবং বিশ্বজনমত বিভ্রান্ত করার জন্য, দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্যই সরকার এই ধরনের নীতি বিবর্জিত কার্যকলাপ করে চলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো বাংলাদেশের সব তথ্যের উপর আস্থা রাখতে পারছে না।'
বিএনপি সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারি ও গৃহ গণনার ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, সভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে উত্থাপিত ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে’ সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে গণতন্ত্রকে হরণ করছে।
এমএইচ /আরএ/