বিএনপি কি পাকিস্তান থাকে প্রশ্ন আইনমন্ত্রীর
বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন মন্ত্রী আনিসুল হক জানতে চেয়েছেন, বিএনপি কি পাকিস্তানে থাকে, তাদেরকে নির্বাচনের জন্য হাত ধরে ডেকে আনতে হবে?
তিনি বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন হয়েছে। এখন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি করছেন। কিন্তু এই প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে এক সুতাও ছাড় দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট পাশের আগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে আনিত মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনায় এমপিদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত কেয়ারটেকার সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নিয়েছেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি দলীয় দুইজন সংসদ সদস্য বিগত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ তারাই ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে এই সংসদে এসেছেন। তারা এই সংসদে নিয়মিত কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমোরিকাসহ বিশ্বের কোথাও বলার সুযোগ নেই শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সম্পর্কে বিস্তরিত তথ্য তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে হ্যাঁ-না ভোট দেখেছি। প্রেসিডেন্ট পদে ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু কাউকে ভোট কেন্দ্রে যেতে হয়নি। বিএনপি আমলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা সকলেই জানেন। মাগুরার উপ-নির্বাচনেও কি হয়ে তা সকলের জানা আছে। তাদের সময়ে জাস্টিস আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা দেখেছি। এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে বলে তিনি দাবি করেন।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপির দুজন এমপি এখানে আছেন, একজন তো বললেন নির্বাচিত হয়ে আসার পরে যে নির্বাচন হয় নাই। উনি সংসদে নিজ সিটে বসছেন তবু বলছেন নির্বাচন হয়নি। তাহলে স্বাভাবিক ভাবে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে- উনি সংসদে গেলেন কিভাবে? এটার উত্তর তিনি দেবেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও কিছুদল দাবি জানাল, যতক্ষন না নির্বাচন কমিশন আইন না করা হচ্ছে ততক্ষণ উনারা নির্বাচনে যাবেন না। এখন তো নির্বাচন কমিশন আইন হয়েছে। এখন ওনারা বলা শুরু করলেন এত তাড়াতাড়ি আইন হলো কেন? ওনাদের এখনকার দাবি যে কেয়ারটেকার গর্ভমেন্ট হতে হবে, তাহলে ওনারা নির্বাচনে আসবেন। ওনারা বার বার বলছেন তাদরেকে নির্বাচনে আনতে হবে। তারা কি পাকিস্তানে থাকেন যে তাদের ওখান থেকে ডেকে আনতে হবে, ওনারা তো বাংলাদেশে থাকেন, ওনারা চাইলেই নির্বাচনে আসতে পারেন , নির্বাচন করতেও পারেন। কেউ তো বাধা দিচ্ছে না।
আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একটা সুষ্টু নির্বাচন করতে যে প্লেয়িং ফিল্ড দরকার সে প্লেয়িং ফিল্ড করা হবে। এখন আইন অনুযায়ী ইলেকশন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ভোটের সময় সকল কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে, তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগের বিষয়ে আইন মন্ত্রী বলেন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া কনিষ্ঠ পুত্র যে টাকাটা দুর্নীতি করে সিঙ্গাপুরে রেখেছিলেন তা আমরা কিন্তু এভাবেই এনেছি।
সংসদে পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনা করায় আপত্তি তোলেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। তার জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, রুমিন ফারহানা গতকাল বলেছেন আমরা নাকি ওনাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা নিয়ে সংসদে সময় নষ্ট করি। আমি বলবো আমরা এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। কেননা পদ্মা সেতু আমাদের জন্য একটা বিরাট অর্জন। আমি বলবো, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীর পিতার নেতৃত্বে আমরা বিজয় লাভ করি তার পরে যদি দেশের বিরাট কোন অর্জন থাকে সেটা হলো পদ্মা সেতু। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো নাকি ওনার পোষাক আশাক নিয়ে আলোচনা করবো? এসময় সংসদে হাসির পড়ে যায়।
পরবর্তীতে আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, মন্ত্রী এমন অশালীন ভাষা কিভাবে বলেন? আমি ভাবতে পারি না, যেখানে সংসদে প্রধানমন্ত্রী, আপনি স্পিকার, বিরোধীদলের নেতা সবাই নারী।
এসএম/এএস
