সকলের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি শেখ হাসিনা: মির্জা ফখরুল
শেখ হাসিনা সকলের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলেছেন তা দুঃখজনক। আমরা কোনোভাবেই সেটা মেনে নিতে পারি না। আমরা বারবার বলছি-উনার (শেখ হাসিনা) এই সব কথা সত্যের অপলাপ, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দেওয়া হয়।
শুক্রবার ২৪ খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত নয়। তখন বিএনপির জন্মই হয়নি। জিয়াউর রহমান তখন আর্মির ডেপুটি চিফ। অথচ যিনি আর্মি চিফ ছিলেন তিনি এগিয়ে আসেননি, তারপরও তাকে পুরষ্কৃত করেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে কটুক্তি করেছেন। আমাদের পক্ষ থেকে এগুলোর উত্তর দিতে ভালো লাগে না। কারণ শেখ হাসিনা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষা ব্যবহার করেন। আমি আজকেও বলেছি, একটু যদি উনার শুভ বুদ্ধির উদয় হয়-তিনি নিজে এ সমস্ত কথা না বলে তাদের যে চাটুকার দল আছে তাদের কে দিয়ে বলালেই তো পারেন। আমার কাছে এটা নোংরা ব্যাপার মনে হয় যেভাবে তিনি কথা বলা।
তিনি বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে কথা বলেছেন-এইকথা গুলো অবান্তর। তিনি (তারেক রহমান) আমাদের দলের আছেন, কিভাবে থাকবেন এটা সম্পূর্ণ দলের ব্যাপার। তিনি (শেখ হাসিনা) কথা বলেছেন তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে বিদেশে গিয়েছেন? মুচলেকা দিয়ে তো অনেকে গেছেন। শেখ হাসিনা তো আমেরিকায় গিয়েছিলেন কানের চিকিৎসা করানোর জন্য। এটা তো আমরা সবাই জানি। রাজনীতিতে এখনো আমাদের কিছু শিষ্টাচার ও মূল্যবোধ আছে, সেটা আমরা মেন্টেইন করতে চাই। আমরা নোংরা অপমানজনক কথা তাদেরকে বলতে চাই না। চাটুকার দল এসব কথা বলতে পারেন কিন্তু তিনি (শেখ হাসিনা) নিজেই এসব কথা বলেন। তিনি এইসমস্ত বিষয়গুলো অবতারণরা করেন। আমরা এসব কথার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আশা করি ভবিষ্যতে তিনি এসব মন্তব্য ও কটুক্তি করা থেকে বিরত থাকবেন। একজন প্রধানমন্ত্রী একটি রাজনৈতিক দলের সভাপতি তিনি যদি এই ভাষায় কথা বলতে থাকেন এটা একেবারেই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি কিছুতেই ভুলতে পারেন না যে তিনি শুধু আওয়ামী লীগের লোক, প্রধানমন্ত্রী সকলের হওয়ার কথা ওটা তিনি এখনো হতে পারেননি।
ত্রাণ সহায়তায় আর্থিক যোগান কিভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা প্রত্যেকে ৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বন্যার্তদের আর্থিক সহায়তা করছেন। এছাড়াও লিফলেট প্রচার করেছি সেক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ যদি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে চায় আমরা তাদের সহায়তাও নিবো। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি পরিমাণে এসে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যে আমাদের দলের অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যারা ত্রাণ সহায়তায় গিয়েছেন তারা এখান থেকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে গিয়েছেন। প্রতি প্যাকেটে প্রায় ১৫শ থেকে ২০০০ হাজার টাকা সমপরিমাণ ত্রাণ সামগ্রীক থাকছে। আমরা মনে করে বিরোধী দল হিসাবে আমরা বন্যা কবলিত মানুষের জন্য যা করছি তা অত্যন্ত যথেষ্ট হচ্ছে।
বন্যার্তদের জন্য সরকারি সাহায্য পর্যাপ্ত নয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বলা হয়ে থাকে রোল মডেল অথচ বন্যায় প্রমাণিত হয়েছে এটা কোনো কাজ করে না। আগাম সতর্কবার্তা পর্যন্ত মানুষকে দেওয়া হয়নি। জনগণকে সতর্ক করা গেলে তারা নিজেরা যেভাবে সব সময় সতর্ক হয় সেভাবে একটা ব্যবস্থা নিতে পারতো। যার ফলে ৪২ জন ইতোমেধ্য মারা গেছেন সরকারি হিসাবে, এরমধ্যে আরো পাওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ ছুটি দেওয়া হয়েছে এবং পদ্মা সেতুর আশে পাশে জেলাগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোকসজ্জার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। শুধু মাত্র পাশের জেলাগুলোকেই দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আনন্দ উৎসবের জন্য টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু মানুষ যে মারা যাচ্ছে এটার জন্য তারা সেরকম ব্যবস্থা নিতে পাচ্ছেন না। এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার এবং বুঝা যায় এই সরকারের মূল লক্ষ্য জনগণ নয়, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বড় বড় প্রজেক্ট উদ্বোবন করা যাতে করে ওইখান থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারে। যেটা বিদেশে পাচার করতে পারে।
এমএইচ/