বন্যা পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিতেই রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠক
দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের চেয়ে বন্যা পরিস্থিতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির। ইতিমধ্যে একটি ত্রাণ কমিটি গঠন করেছে দলটি। বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় তুলে ধরতে সোমবার ২০ জুন রাতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছে বিএনপি।
বৈঠকে মূলত বন্যা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপ, নির্বাচন কমিশনের সংলাপ পর্যবেক্ষণ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক ও চিকিৎসার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ঢাকাপ্রকাশকে এ তথ্য জানান।
সংশ্লিষ্ট নেতার মতে, কর্তৃপক্ষের কাজ বিএনপির কাছে খুব হাস্যকর লেগেছে। ১৯৯১ সালে প্রথম আমাদের নেত্রী যখন প্রথম ক্ষমতায় এসে ছিলেন তখন সবচেয়ে বড় তুফান হয়ে ছিল। তখন উনি নিজে মানুষের পাশে গিয়ে কাজ করেছেন। আজকে এরকম একটা ভয়াবহ বন্যা, যা ১৪০ বছরে ওই এলাকায় হয়নি। সেই সময়ে এই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করে যে- ২০ লাখ টাকা আর কয়েক টন চাল বরাদ্দ করেছে। এটা আমি মনে করি জনগণের সাথে ব্যঙ্গ করা। ব্যঙ্গ তারা করতেই পারে। কারণ তাদেরতো ভোটে প্রয়োজন হয় না। তাচ্ছিল্য করে রিলিফ দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের নেতা-কর্মীরা জনগণের পাশে থেকে রিলিফ দিচ্ছে। সিলেটের মানুষের কাছে লক্ষ্যনীয় যে বিএনপি কাজ করছে।
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সিলেটের বন্যা আমরা যা দেখছি সকালে হাঁটুপানি দুপুরে মধ্যে কোমর পানি। এছাড়াও গোটা সুনামগঞ্জ শহর রীতিমতো পানিতে ভাসছে। আর প্রধানমন্ত্রী ভাসছেন আনন্দে আত্মহারায়ে পদ্মা সেতু পদ্মা সেতু দেখিয়ে। পদ্মা সেতু যে ভেলকিবাজি এটা জনগণ জানে। জনগণের সাথে একটা মশকরা করছেন ভেলকিবাজি দেখাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সিলেট সুনামগঞ্জ ৫০ লাখ লোক পানিবন্দি। তাদের জন্য এক থেকে দেড় টাকা, আর পদ্মা সেতুর বিচিত্র অনুষ্ঠানে ভারত থেকে এসেছেন নাকি একজন নিত্য শিল্পী তাকে নাকি দেবেন তিন কোটি টাকা। আর সিলেটে বন্যার্ত মানুষ সুনামগঞ্জে বন্যার্ত মানুষ নেত্রকোনার বন্যার্ত মানুষ কুড়িগ্রামের বন্যার্ত মানুষ তাদের জন্য এক থেকে দেড় টাকা।
এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছেন সাংগঠনিক কাজকর্ম রেখে বন্যার বিষয়টি একমাত্র প্রাইরোটি দিয়ে বানভাসি মানুষে পাশে দাড়াতে হবে। আমরা চেষ্টা করবো যতবেশি মানুষের কাছে পৌছানো যায়।
তিনি বলেন, সিলেট বিভাগে গত ১০০ বছরে এমন বন্যা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি গণমানুষের দল হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সিলেট জেলা, মহানগর, সুনামগঞ্জ জেলা, পৌরসভা, ছাতকে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা রিলিফ অপারেশন শুরু করেছেন। এছাড়াও দলের বিভিন্ন অংগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। আমরা যেন এই রিলিফ মানুসের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারি সেজন্য সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের প্রতিটি অংগ সংগঠন নিজেদের ব্যানারে প্রতিটি বন্যা উপদ্রুত এলাকায় কাজ করবে। তারা প্রত্যেকটা সংগঠন স্টিয়ারিং কমিটি করবে সেই কমিটি তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করবে। রিলিফ ঠিকমতো যাচ্ছে কি না দেখবে। তারা দুই দিনের মধ্যে তাদের কর্মপরিকল্পনা স্থির করে বন্যা ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমার কাছে জমা দেবে, সেভাবে কাজ করবে।
টুকু বলেন, এখন পর্যন্ত যে রিপোর্ট পেয়েছি সেখানে আমাদের কর্মীরা প্রায় দশ হাজার লোকের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। তারা বড় বড় নৌকা ভাড়া বন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে ব্যবস্থা করেছে। সেখানে প্রায় ১০০ নৌকা কাজ করছে। ওইসব এলাকায় নৌকারও অভাব হয়ে গেছে। নৌকাও ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ অনেকে নিজেদের নৌকা নিয়ে পার হচ্ছে। ছাতকে বন্যার প্রকোপ বেশি। সেখানে আমাদের কর্মীরা নিজেরা টাকা তুলে প্রায় ১০লাখ টাকা মানুষের মাঝে বিতরণ করেছে। এভাবে বিএনপি একটা গণমানুষের দল হিসেবে আমরা মানুষের পাশে আছি। বন্যাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করেছি। এখন যারা পানিবন্দি আছে তাদের উদ্ধার করে খাবার পৌঁছে দেওয়া। তারপর যখন পানি যখন কমবে তখন তাদের গৃহনির্মাণ, খাবার ওষুধের ব্যবস্থা করবে। তারপরে যাদের কৃষি জমি নষ্ট হয়ে গেছে তারা যাতে চাষবাস করতে পারে আমরা আমাদের কৃষক দলের পক্ষ থেকে বীজতলা তৈরি করা, বীজ দেওয়া এসব ব্যবস্থা করবো। আমাদের ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে যে রোগ বালাই হবে তাদের মাধ্যমে ওষুধ বিতরণ, খাবার পানি বিশুদ্ধকরার জন্য ট্যাবলেট বিতরণ করবো। এসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এটা আমরা কতটা করতে পারলাম সেটা রিভিউ করার জন্য আগামী ২১ জুন আমার বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেব।