জনগণকে ঋণের বোঝায় জর্জরিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী : রিজভী
পদ্মা সেতুর আলোকোজ্জ্বল উদ্বোধনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আপনি (শেখ হাসিনা) যে আলোকোজ্জ্বল উদ্বোধনের কথা বলছেন ৬৪ জেলায় এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আপনি করবেন। এটা কিসের জন্য? এগুলো কার টাকায় করবেন? এগুলো তো জনগনের টাকা। জনগণকে ঋণের বোঝায় জর্জরিত করে আপনি উল্লাস করছেন? আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী এ দেশের শ্রেষ্ঠ একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী কাতরাচ্ছেন হসপিটালের বেডে তার চিকিৎসা করার ন্যূনতম সুযোগ নেই।’
সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আপনি এত ঢাকঢোল পিটিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করছেন। বিভিন্ন দেশের ডেভলপমেন্ট দেখেছি। ১৯৭২ সালে সাগরের নিচ দিয়ে রেল লাইন নিয়ে গেছে সেখানে এত ঢাকঢোল দেখেনি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে লন্ডনে মাটির নিচ দিয়ে ট্রেন লাইন নিয়ে গেছে সেখানে তো এত ঢাক ঢোল পিটাতে শুনিনি।’
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নিউ ইয়র্কে মাটির নিচ দিয়ে ট্রেন লাইন নিয়ে গেছে তারা তো ঢাক-ঢোল পিটিয়নি। আপনি এত ঢাকঢোল পেটাচ্ছেন কিসের জন্য? যদি আপনার নিজের টাকায় তৈরি করা হতো। বা আপনার টাকা দিয়ে করা হতো তাহলে একটা কথা ছিল। পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে সাধারণ জনগণের টাকা দিয়ে। রিকশাওয়ালা, সিএনজি ওয়ালা, বাসের ড্রাইভার, ব্যবসায়ী এইযে পথচারী এদের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু করা হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রথমে যারা পদ্মা সেতুর কাজ নিয়েছিল তারা আপনাদের দুর্নীতির কারণে সরে গেছে। আপনার মন্ত্রী দুর্নীতির কথা বলেছে। আপনার উপদেষ্টা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এখন জনগণের ওপর অনেক ঋণ চাপিয়ে দিয়ে। চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সেতু করে এখন বলছেন নিজের অর্থায়নে করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে বলতে একেবারে নিজের অর্থ দিয়ে করা তাহলে ঋণ নিয়েছেন কেন? এই মিথ্যা কথা কেন বলছেন? একেবারে মিথ্যার উপর দিয়ে এ সরকার চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনি পদ্মা সেতুকে অপায়া করছেন। আপনি পদ্মা সেতু থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে টুস করে ফেলে দিবেন। যিনি দেশের সম্মান নিয়ে এসেছে সেই ড. ইউনুসকে চুবানি দেবেন। তাই জনগণ এখন মনে করছে এই পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়া যাবে না কারণ এটা প্রথমে অপায়া করে দিয়েছেন। মানুষের কাছে একটি বিরক্তি সৃষ্টি করেছে।
বাংলা একাডেমি মহাপরিচালকের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বাংলা অভিধান এর কিছু নতুন শব্দ সংযোজন করেন। প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ থেকে কিছু নতুন শব্দ আমদানি করেছেন এগুলো এখন অভিধানে সংযোজন করা দরকার। গোপালগঞ্জের শব্দ টুস করে, চুবানি আমার মনে হয় এ শব্দগুলো আপনার ওখানে (বাংলা একাডেমীতে) সংযোজন করা দরকার।
তিনি বলেন,'বাংলাদেশে এখনো উন্নত চিকিৎসা নেই। যদি থাকতো তাহলে মানুষ কেন ঝাকে ঝাকে ভারত সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য রাষ্ট্রে যায়? খালেদা জিয়া পায়ে হেঁটে জেলখানায় গেলেন। আর হুইলচেয়ারে করে বের হলেন। আপনি কি নির্যাতন করেছেন? আপনি খাবারের মধ্যে কি বিষ দিয়েছেন? গোটা জাতির মুখে এই প্রশ্ন।
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি কি শূন্যতা সৃষ্টি করতে চান? ইউরোপ একটা কথা আছে প্রকৃতি শূন্যতা ঘৃণা কর। আপনি মনে করেছেন বেগম খালেদা জিয়া আর মনে হয় উঠে দাঁড়াবে না। তারেক রহমান দেশে আসতে পারবে না। এই শূন্য মাঠে আমি এক মহারানী। আপনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। শেখ হাসিনা আপনি ঝড়ের পূর্বভাস বুঝতে পারছেন না। যখন শূন্যতা শুরু হয় চারদিক থেকে ঝড় আসতে শুরু করে। আর এই কালবৈশাখীর ঝড়ে খড়কুটোর মতো আপনার সরকার উড়ে যাবে। আপনি টের পাবেন না। আপনি টুস করে বলেছেন তো? আপনার সরকার ধপ করে পড়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘মহিলাদের একটা প্রোগ্রাম করেছে আর আপনি চারপাশে পুলিশ মোতায়েন করেছে আপনার এত ভয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে ও আপনার ভয় যায় না। আপনি বিরোধী দল দমন করার চেষ্টা করছেন। তাদের সভা-সমাবেশ করতে দিতে চান না এই ভয়ে যে আপনার কুকীর্তি প্রকাশ পেয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া নারী ক্ষমতায়ন, যুবকদের বেকারত্ব থেকে মুক্ত অসংখ্য কাজ করেছেন। এইজন্যে আপনি শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি এত ক্ষোভ যে আমি এত কিছু করলাম মেট্রোরেল করলাম পদ্মা সেতু করলাম তাও দেশের জনগণ বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি এত ভক্ত কেন। এই হিংসা থেকে আপনি বের হতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। আপনি বের হতে না পারলে এই দুর্ভাগ্য আপনার।’
সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাস এর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এমএইচ/এমএমএ/