দোষীদের সাময়িক ছাত্রত্ব বাতিল, সিট বাতিল ও সতর্ক করা হলো
লেখা ও ছবি : আতোয়ার রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৮ ফেব্রুয়ারি, সোমবার ময়মনসিংহের ত্রিশালের ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়’র ‘লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যা’র ২০১৯-’২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ওয়ালিদ নিহাদকে ব্যাপকভাবে মারধর ও গালাগালির ঘটনা ঘটেছে। এরপর আহত ও নির্যাতিত ছাত্রটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বরাবর তার হল এবং বিভাগের শিক্ষকদের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারপর তদন্ত করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি দোষী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিপক্ষে তাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
মারধর ও গালাগালির শিকার নিহাদ তার শিক্ষকদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগে বলেছেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র রাকিবুল হাসান রাকিব গ্রুপের ছাত্ররাজনীতি না করায় তাকে তার হলের রুমে ব্যাপকভাবে মারধর ও গালি দেওয়া হয়েছে। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র। তার রুমে এসে ১৫ জন ছাত্র নামধারী মিলে মেরেছে।’
৭ মার্চ, ২০২২ তারিখে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘শৃঙ্খলা কমিটি’র জরুরী সভা বসেছে। শুরু হয়েছে বিকাল ৩টায়। কমিটির চেয়ারম্যান ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. সোমিত্র শেখরের নেতৃত্বে শিক্ষকদের আলোচনা হয়েছে। তারা রাত ১০টা পর্যন্ত টানা বৈঠক করেছেন। ভুক্তভোগী ও নির্যাতনকারীদের বক্তব্য একে, একে শুনেছেন। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
সাময়িকভাবে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন ছাত্র ও ছাত্রলীগের কমীকে। তাদের স্থায়ীভাবে কেন বহিস্কার করা হবে জানতে চেয়ে কারণ দশানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। মোট আটজন ছাত্রের হলের সিট বাতিল করা হয়েছে। সতর্কীকরণ পত্র জারি করা হয়েছে চারজনের বিপক্ষে।
সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যার ছাত্র মোমেন সরকারকে। তিনি ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। শ্রেণী রোল নম্বর-১৫১২৩১৩৬। তার সঙ্গী হয়েছেন তাদের ছাত্রলীগের কর্মী যাযাবর নাঈম নামে ক্যাম্পাসে পরিচিত ফোকলোরের ছাত্র আবু নাঈম আব্দুল্লাহ। তার শ্রেণী রোল নম্বর-১৬১২৩২৭০, ২০১৫-'১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তৃতীয় বহিস্কার আদেশটি পেয়েছেন সামিউল হক হিমেল। তিনি ২০১৬-’১৭ সেশনের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা’র ছাত্র, শ্রেণী রোল নম্বর-১৭১১২৮৩৮। একই বিভাগের ২০১৮-’১৯ শিক্ষাবর্ষের ও ১৯১২৩১২৭ রোল নম্বরের ছাত্র তানভীর আহমেদ তুহিনকেও সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। এই চারজন আর ক্যাম্পাসের হলে ছাত্র হিসেবে বসবাস করতে পারবেন না। তাদের হল সিটগুলোও বাতিল করে সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। শৃঙ্খলা কমিটি আগামী ১৪ মার্চ বা ১৫ দিনের মধ্যে কেন তাদের প্রত্যেককে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হবে না বা ছাত্রত্ব বাতিল করা যাবে না জবাব আবেদন আকারে লিখে দেবার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করার সুপারিশ গ্রহণ করেছে। তাদের সঙ্গী স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়নের ১৭১২৩৮০৯ শ্রেণী রোলের ২০১৬-’১৭ সেশনের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী ও মারধরের ঘটনায় যুক্ত আবু সোলায়মান নাঈমেরও হলের সিট বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তার বিপক্ষে সতর্কীকরণ পত্র ইস্যুর সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। এই সতর্কপত্র প্রদান করা হয়েছে সঙ্গী-লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনবিদ্যা’র সারজীল হাসানকে। তিনি ২০১৭-’১৮ সেশনের ছাত্র, রোল নম্বর-১৮১২৩১৩৫। তাদের অন্যতম মো. পলাশকে সতর্কীকরণ পত্র ইস্যুর সুপারিশ করা হয়েছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শ্রেণী রোল-১৯১২৪২৩৫ নিয়ে ২০১৮-’১৯ সেশনে ভতি হয়েছেন তিনি। তাদের অন্যতম জোবায়ের আহমেদ সাব্বিরকে সতর্কীকরণ পত্র ইস্যু করতে সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি ইইএস (ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স সায়েন্স)তে পড়ালেখা করেন। তার শিক্ষাবষ-২০১৮-’১৯। শ্রেণী রোল-১৯১০২৯০৬। হল সিট বাতিল করা হয়েছে-২০১৭-'১৮ শিক্ষাবষের, ১৮১২৩৭৪৮ শ্রেণী রোল নম্বরের ‘জনসংখ্যা বিজ্ঞান’র ছাত্র মোহাম্মদ সৌরভ হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতির ২০১৮-’১৯ শিক্ষাবর্ষের ১৯১৩২৫২৩ রোল নম্বরধারী মো. ছনিক মিয়া, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একই সেশনের ১৯১৩৩০১৮ রোল নম্বরের মো. মোজাহিদ হোসেন সজীবেও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণ করা ব্যবস্থায় এই প্রতিজন ছাত্রের নামে গ্রহণ করা ব্যবস্থা ও যাদের সতক করা হয়েছে তাদের সতর্কপত্রের অনুলিপি রেজিস্টি ডাকযোগে তাদের বাড়ির ঠিকানায় অভিভাবকদের জানানোর জন্য প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা ভবিষ্যতে কেউ তাদের বিপক্ষে নেওয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে আবার কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটালে এবং এমন কোনো ঘোরতর অন্যায়ে যুক্ত হলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেই সুপারিশও গ্রহণ করা হয়েছে।
সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেছেন, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের বিপক্ষে হওয়া তদন্ত কমিটির প্রদান করা প্রতিবেদনানুসারে ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দোষী ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা কোনো দল বিবেচনা করিনি। ন্যায়বিচারের প্রশ্নগুলোই গুরুত্ব দিয়েছি।’ ড. সৌমিত্র শেখর জানিয়েছেন, ‘আইনতভাবে আমাদের দোষী ছাত্রদের সবাইকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে ও এরপর সব সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইন মেনে নেওয়া হয়েছে।’
ওএস।