‘কূটনৈতিক দুর্বলতাই সীমান্ত হত্যার জন্য দায়ী’
সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে না পারার পেছনে সরকারের কূটনৈতিক দুর্বলতা অনেককাংশে দায়ী বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ন্যাপ।
বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। এ বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একেবারে গোড়া থেকে কাজ শুরু করতে হবে।
৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তারা।
দুই নেতা বলেন, সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যতে আনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই সম্মত হয়েছে কয়েক বছর আগে। তারপরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে বিএসএফ আত্মরক্ষার জন্য হত্যা করে। কিন্তু, বাস্তবতা তা প্রমাণ করে না।
ফেলানী দিবস উপলক্ষে নেতারা বলেন, ফেলানী হত্যার ফলে বাংলাদেশে এবং ভারতেরও বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয় ফেলানীর ঝুলন্ত দেহের ছবি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও ন্যায় বিচারের দাবি থাকলেও সে বিচার আজও সমাপ্ত হয়নি। ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশও আমলে নেওয়া হয়নি। যা অত্যান্ত দুঃখজনক।
তারা বলেন, ভালো প্রতিবেশী দেশ সীমান্তে চলাচলকারীদের সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আচরণ করে। ভারত সরকারের এটা নিশ্চিত করা উচিত যে তার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান করছে এবং আইনের শাসন অনুসরণ করছে। বিএসএফ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে জাতিসংঘের সাধারণ নীতিমালা মেনে চলার জন্য প্রকাশ্যে আদেশ দেওয়া উচিত। বিএসএফের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত তার সদস্যদের বিচার করতে পারেনি। ভারত সরকার বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে নির্যাতনের মামলাগুলো তদন্তের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
নেতারা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর উচিত একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের জন্য দাবি তোলা। সেখানে এ জাতীয় ঘটনার জন্য ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই অভিযোগ জমা দিতে পারবে। প্রয়োজনীয় প্রমাণও জমা দেবে উভয় পক্ষ। এই কমিশনটি হবে স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ।
এই দুই নেতা আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কোনো অর্থবহ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চাপ বাড়িয়ে বাংলাদেশ সরকারকে একটি কঠিন পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে। এধরনের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য এখনই নয়াদিল্লির নীতিনির্ধারকদের পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
তারা বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তোষণনীতির কারণেই সীমান্তহত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশের সরকারগুলোর অবস্থান সকল সময়ই নতজানু। জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যই বিজাতীয় আগ্রাসনকে তীব্র করছে।
এসএন