বিদায়ী আইজিপির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে রিজভীর প্রশ্ন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে, কিন্তু কেন? কিসের জন্য একজন বিদায় নেওয়া কর্মকর্তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে? উনার আগে যারা বিদায় নিয়েছে তাদের তো এত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাহলে এখন যিনি বিদায় নিচ্ছেন তাকে দিয়ে এমন কী অন্যায়, অবিচার করানো হয়েছে যে নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে। এর জবাব কিন্তু দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে আয়োজিত প্রতিবাদী ছাত্রসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদকে নিয়ে একটা সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। তাকে নাকি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই ওই আইজিপিকে আপনি কেন নিরাপত্তা দিবেন? আপনি তাকে দিয়ে কী অন্যায় করিয়েছেন যে রিটায়ার্ড করার পরও তাকে নিরাপত্তা দিতে হবে? এর আগের আইজিপিকে তো নিরাপত্তা দেননি। তাহলে এই অবসরের পরে কেন এই আইজিপিকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন? এগুলোর অনেক অর্থ অনেক বিষয় জানা যাবে। কারণ অনেক গুম হওয়া পরিবারের কান্না, অনেক ক্রসফায়ারের কান্না এখানে নিহত আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর এবং প্রক্টরকে চৌকিদার বলব নাকি হোটেলের ম্যানেজার বলব এমন প্রশ্ন রাখেন রিজভী। তিনি বলেন, গত পরশুদিন ছাত্রদল একটা প্রেস কনফারেন্স করেছে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার প্রতিবাদে বক্তব্য দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আমার বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আমি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রক্টরকে চাকর-বাকর বলেছি। তো আমি আর কী বলতে পারি? চৌকিদার বলব নাকি হোটেলের ম্যানেজার বলবে।
রিজভী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড আমরা বলে থাকি। এখানে স্যার এফ রহমান, বজলুল হানিফ চৌধুরী, শামসুল হক, অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। উনারা শিক্ষক ছিলেন। কোন ছাত্র কোন দল করে এটা তাদের কাছে বড় বিষয় ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একাডেমিক টোন সেই টোনকে নষ্ট করেছে, ধ্বংস করেছে ঢাবির ভিসি আখতারুজ্জামান। আজ এই অসত্যের যুগে, মিথ্যার যুগে অনর্গল যে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলে সেইখানে তার (শেখ হাসিনা) দুষ্কৃতি ছাড়া, গুপ্তঘাতক ছাড়া আর কাকে সেখানে দিতে?
মুন্সিগঞ্জের এসপি শেখ হাসিনার আদর্শ সন্তান মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আজ দেখেন মুন্সিগঞ্জের এসপি সেটাও শেখ হাসিনার আদর্শ সন্তান অনর্গল মিথ্যা কথা বলে। পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে শাওনকে। তার ডেট সার্টিফিকেটে লেখা আছে মেসিব হেড ইনজুরি ডিউ টু গান শট। এসপি বললেন ইটের আঘাতে মারা গেছে। কিসের জন্য নিজের অপরাধ ঢাকতে চান এসপি সাহেব? নিজের অপরাধ ডেকে লাভ নাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতাদেরকে অতিথি আপ্যায়ন হয়েছে লাঠি দিয়ে। ছাত্ররা (ছাত্রদল) ফুল আর মিষ্টি নিয়ে গেছে ভিসির সঙ্গে দেখা করতে। আর সেখানে অতিথি আপ্যায়ন হয়েছে লাঠির মাধ্যমে। এমনভাবে ছেলেমেয়েদের পেটানো হয়েছে, সাপকে মানুষ এভাবে পেটায় না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয়, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি করে যাচ্ছি। অধিকার রক্ষায় আন্দোলন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। যেকোনো স্বৈরাচার সরকারকে হটাতে গেলে অনেক বাধা আসবে। আমরা এসব বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাব। তবে বড় ধরনের কোনো বাধা আসলে তা কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় সেটা বিএনপি জানে, দেশের জনগণ জানে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ইভিএম দিয়ে নির্বাচন করবে, সেটা ভুলে যান। দেশের জনগণ এটা করতে দেবে না। আমরা আপনাদের প্রতিহত করতে প্রস্তুত। তবে আমরা মিটিং মিছিল করব আর সেখানে গুলি করবেন, সেটা আমরা যেকোনোভাবে প্রতিহত করব।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন, লাঠি খেলা চলবে না। আর পুলিশ বলছেন, লাঠি নিয়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। আমরা লাঠি নিয়ে কোথাও যাই না। আপনারা ঘোষণা দেবেন লাঠি নিয়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। অন্যদিকে লাঠি দিয়ে পেটাবেন, এটা তো ভালো কথা হলো না। আমরা কোনো লাঠি মিছিল করব না। কোনো আজে-বাজে কাজেও যাবে না। শান্তিপূর্ণ মিছিল, মিটিং করব আমরা। আমরা লাঠি মিছিল করি না। আমরা লাঠি খেলাও করি না। ওটা আপনারা (আওয়ামী লীগ) করেন। আপনারা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে যে নারকীয় কাণ্ড ঘটিয়েছেন তা দেশের মানুষ কখনো ভুলবে না।
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।
এমএইচ/এসজি