বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে আলোচনায় সমাধান চায় ছাত্রদল
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কিত জটিলতা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আবু হোরায়রা। এর পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ আইনি নোটিশ পাঠানো ও রিট করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ক্যাম্পাসের ভিতরে অসাংবিধানিকভাবে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নয়া পল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিসে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন আবু হোরায়রা।
বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। প্রত্যক নাগরিক তার পছন্দমত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তার রাজনৈতিক ভাবনার বিস্তার ঘটাতে পারবেন। সংবিধান সেই ক্ষমতা নাগরিককে দিয়েছেন৷ সংবিধানের ৩৮নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র নাগরিকদের এই অধিকার নিশ্চিত করার কথা বহা আছে। সংবিধানের-৩৯ নং অনুচ্ছেদে, জনগনের চিন্তা-বিবেক, বাক স্বাধীনতা এবং ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে।
আবু হোরায়রা বলেন, ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ইউজিসির নীতিমালায়। এই নীতিমালায় ছাত্র সংগঠন করা যাবে না এমন কিছু বলা হয়নি এবং ২০১০ সালে ইউজিসির সেই নীতিমালায় পরিবর্তন আসে সেখানেও ছাত্র সংগঠন করা যাবে না এমন কিছু বলা নেই। ইউজিসির নীতিমালার ৬নং ধারার ১০ উপধারায় বলা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থে ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না এবং ৯ ধারার ৫ উপধারায় বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্জন, চলা-ফেরা ও নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করতে হবে।
'৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে '৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং '৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতির এরকম গৌরবজ্জল ইতিহাস থাকলেও, ক্রিয়াশীল ছাত্ররাজনীতি ধ্বংসের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এক শ্রেণির নতজনু, প্রভুভক্ত, আত্মকেন্দ্রীক গোষ্ঠী।
বর্তমান প্রজন্ম রাজনৈতিক ভাবে অসচেতন হলে, দেশে দূর্নীতি, লুটপাট, ভয়ের সংস্কৃতি, বিচারহীনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির অভাবে দেশ একসময় বিদেশি প্রভু নির্ভর অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দর্শনের চর্চা না হলে, এক ধরনের মৌলবাদী-সন্ত্রাসী সংগঠনের উত্থান হওয়ারও ঝুঁকি রয়ে যায়।
তাই, বৈশ্বিক রাজনীতিতে টিকে থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মেধাভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি চর্চার বিকল্প নেই। আর মেধাবী নেতৃত্ব বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উঠে আসতে হবে।
আবু হোরায়রা আরও বলেন, রাজনীতি করা ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। কোন প্রতিষ্ঠান সেটি নিষিদ্ধ করতে পারেনা। আমাদের জাতি হিসেবে যত অর্জন তার প্রতিটিতে ছাত্র রাজনীতি বিশেষ অবদান রেখেছে সব সময়৷ রাজনীতি সচেতন হওয়া প্রত্যেকটি মানুষের জন্য জরুরি৷ বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের জন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে উঠবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসি'র সঙ্গে কোন প্রকার পরামর্শ না করে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান দেখিয়েছেন। দেশের সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। সুতরাং, কোন ছাত্র সংগঠন যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নিয়মিত বৈধ ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত হয় ও নির্দিষ্ট কাঠামো মোতাবেক গঠিত হয়, তবে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এমএইচ/এএস