আ. লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন
আ. লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন। ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ সংবাদমাধ্যমকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নারী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি শেরপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বামপন্থী রাজনীতির মাধ্যমে। প্রথমে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর সদস্য হিসেবে তিনি রাজনীতি শুরু করেন, পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর বিশেষ অবদান ছিল, যার জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাঁকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।
মতিয়া চৌধুরী ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম গৃহিণী। ব্যক্তিজীবনে, তিনি ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তিনি ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে "অগ্নিকন্যা" নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং সেখানে কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে তিনি কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। তিনি ১৯৯৬, ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ১২ জানুয়ারি ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে নিযুক্ত হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে তিনি পুনরায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। কিন্তু ২০২৪ সালের অসহযোগ আন্দোলনের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।
বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, সংগ্রাম এবং অবদান পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।